পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/২৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3 ве е আলপ্ত ত্যাগ করিয়া শয়নের জন্ত আমি উঠিয় দাড়াইলাম । প্রায় দুই ঘণ্টা বা তাহারও কম সময় আমি ঘুমাইয়াছিলাম। সহসা ঘুম ভাঙ্গিয়৷ গেল। মনে হইল, কে যেন সজোবে আমার ঘাড়ে ঠেলা দিয়া ডাকিঠেছিল"জ্যাকৃ! জ্যাক্!” রাত্রির অন্ধকারে, ঘুমেব ঘোরেও বুঝিতে পাবিলাম, বাবা নিজেই ডাকিতে ছিলেন। তাহার স্থলিত বেশ-বাসে এবং উত্তেজিত কণ্ঠস্বরে বিশেষ কোন দুর্ঘটনাবই আভাষ পাইলাম। তাড়াতাড়ি শয্যা ছাড়িয়া উঠিয়া পড়িলাম । বাবা ব্যস্তভাবে ত্বরিত স্বরে বলিতে লাগিলেন, “জ্যাক্‌, চল, চল, একখানা প্রকাণ্ড জাহাজ ঐ উপসাগরের চড়ায় এসে আটকে গেছে—লোকগুলা বোধ হয় সব মারা যাবে। এস এস ! আমরা একবার চেষ্টা করে দেখি, যদি তাদের কোন কাজে লাগতে পারি।” . অন্ধকারে হাতড়াইয়া যতগুলা পাইলাম শুষ্ক বস্ত্র সংগ্ৰহ করিয়া লইলাম । ঠিক সেই মুহূর্তে ধড়াস্ করিয়া একটা ভয়ানক শব্দ হইল। এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রকাও তরঙ্গের উচ্ছাসের সহিত সে। সে গে। গে। আওয়াজ শুনা গেল। বাবা ব্যাকুলভাবে চীৎকার করিয়া উঠিলেন, “ঐ শোন গে, ঐ —ঐ–আবার তার সাহায্য প্রার্থনার জন্ত কামান ছুড় চে-হায়, হায়—হতভাগার। — জেমিসন আর এক দল নাবিকের নীচে রয়েচে। তোমার ওয়াটার প্রফ ?--গ্লেনগারী টুপিটা ? এ সব—ছাতের কাছে গুছিয়ে রাখতে হয়--? চল, চল, আমাদের এক छांब्राऊँौ পৌষ, ১৩২০ মিনিটের দেরীর জন্ত তাদের কত—অমূল্য জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।” উত্তেজনা ও অধীরতায় বাবা যেন সংজ্ঞাশূন্ত হইয়া গিয়াছিলেন। কিন্তু তখন তাহাকে শাস্ত করিবার প্রয়াস বৃথা—বরং গণ্ডগোলে সময় নষ্ট হইয়া যাইবে । আমরা ছুটিয়াই চলিয়া ছিলাম। ব্রাঙ্কসীমারের অপর চাবজন দয়ালু লোকও আমাদের সাহায্যের জন্ত সঙ্গে আসিয়াছিল । ঝড় না কমিয়া উত্তরোত্তর বাড়িয়াই উঠিতেছিল । বাতাসের সহিত তটাহত সমুদ্র-তরঙ্গের গর্জন-ধ্বনি মিলিত হইয়া যেন একটা পৈশাচিক চীৎকারে দিগন্তু প্রতিধ্বনিত করিয়া তুলিতেছিল । বাতাসের বেগ এত বেশী যে আমরা স্কন্ধ গুটাইয়া তাহার বেগ সহ করিয়া দৌড়িতেছিলাম, বালুক ও কঙ্করাঘাতে অনেক সময় দৃষ্টিশক্তি অবধি হারাইয়া যাইতেছিল। আকাশে ছিল্লমেঘ অস্পষ্ট নক্ষত্রের ক্ষীণ আলোকে আমরা পৰ্ব্বতের ন্যায় উচ্চ সফেন তরঙ্গ ছাড়া আর কিছুই দেখিতে পাইতেছিলাম না। বাতাসের ঝট্রকায় হাটু পৰ্য্যন্ত ঠিকরাণে লতা-পাতায় জড়াইয়া প্রতি মুহূৰ্ত্তে পতন অনিবাৰ্য্য করিয়া তুলিতেছিল। একটা সকরুণ সাহায্য-প্রার্থনার সহিত ভয়-মিশ্রিত ক্ষীণ ক্ৰন্দন আমার কর্ণে যেন বহুদূর হইতে বায়ুস্রোতে ভাসিয়া আসিতে ছিল । ঝড়ের, সমুদ্রেব, মেঘের,—সমস্ত প্রকৃতির সেই বিশ্বব্যাপী সংহার কোলাহলের ভিতর দিয়া মানবের ক্ষীণ কণ্ঠের আর্তনাদ,— কত টুকুই বা তাহার বল! . (ক্রমশ: ) শ্ৰীমতী স্বরূপ দেবী।