পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭শ বর্ষ, দশম সংখ্যা এক কালীন ব্যাকুল বেগে তাহার রোষানল উদ্দীপ্ত বক্ষের মধ্যে আছড়াইয়া পড়িয়া তাহাকে স্তব্ধ করিয়া দিল। নিৰ্ব্বাক্ অভিমানে তিনি তখনি স্থানাস্তরে চলিয়া গেলেন । সে দিন রত্নপুকুরের অবস্থা বলিবায় নয়। পল্লীগ্রামের দলাদলি যাহার জানা আছে এমন একটা কাণ্ডে সেখানকার অবস্থা যে কিরূপ হইতে পারে কেবল র্তাহাবাই তাহ ধারণ করিতে পারিবেন। বৌভাতের যজ্ঞ দেখিতে দেখিতে দক্ষযজ্ঞের আকার ধারণ করিল। গৃহিণীর বহু যত্নেও এ ঘটনা শত কর্ণ সহস্ৰ কৰ্ণ হইতে মুহূৰ্ত্তাধিক কালব্যয় হয় নাই। তখন ভোজনশীলগণ ভোজ্য দ্রব্য সকল চারিদিকে ছড়াইয়া দিয়া ঘোর রোলে উঠিয়া পড়িল । রান্না ঘরে বড় বড় হাণ্ডায় ডাল ভাত পুড়িয়া তীব্ৰগন্ধে দশদিক ভরাইয় তুলিলেও নমাইবার প্রবৃত্তি কাহারও হইল না। অনেকে সহৰ্ষে লুণ্ঠন কাৰ্য্য সম্পাদন করিতে লাগিল,—বারণ করিবাব কেহই নাই। ভদ্র, অভদ্র, বালক, বৃদ্ধ, মেয়ে পুরুষ একসঙ্গে মিলিয়া কেবল একই ঘোট, ঐ একই কথা । দেখিতে দেখিতে পাড়ায় পাড়ায় ঘরে ঘরে কমিটী বসিল, ছড়া বাধা হইল, রাস্তায় রাস্তায় এই অপূৰ্ব্ব মিলন সঙ্গীত গীত হইতে লাগিল, জমিদার বাড়ী ও সে বাড়ীর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে এক ঘরে করা এক বাক্যে সাব্যস্ত হইয়া গেল । - দেশট যখন হাস্তে রহস্তে কুৎসায় ভাসিতেছিল কৰ্ম্মগৃহের মধ্যে তখন অবিচ্ছিন্ন স্তব্ধতার তালে এক মহাবিচ্ছেদের সূচনা জাগিয়া উঠিতেছিল। ক্ষীর, দধি, মৎস, পায়স, ব্যঞ্জন টকিয়া একটা অসহনীয় গন্ধ বাগদত্ত § 0 & 4 নীচে হইতে উপর পর্য্যন্ত ভাসিয়া আসিতেছিল। যাদুমন্ত্রে পাষাণে পরিণত বৎ উৎসবাননময় গৃহ গভীর নিস্তদ্ধ। যে যেখানে আছে যেন গঠিত মূৰ্ত্তিবৎ জমিয়া আছে। প্রাণের স্পন্দন চলিতেছে, অথচ শরীরে যেন প্রাণের কাৰ্য্য নাই। সবাই যেন রুদ্ধশ্বাসে কাহাব মৃত্যুশয্যা ঘেরিয়া তাহার শেষ নিশ্বাসের প্রতীক্ষা করিতেছিল । গিরিজাসুন্দরী হবেন্দ্রকে ডাকাইয়া কহিলেন “দোষ সবারি শুধু এখন ওকে চুষলেই বা হবে কেন ? বিয়ে দিয়ে আনলে কোন বাড়ী থেকে, তার খবরটুকুও কেউ { নিলে না, এইজন্তই বলে বুড় হলে সংসারে থাকতে নেই। এখন এর বিহিত কি স্থির করলে কেউ ?” এই বিষয়েই এত পরামর্শ চলিতেছিল, উপায় স্থির না করিয়াও কেহ স্থির ছিল না, কেবল মুখ ফুটিতেই একটু বাধিতেছিল। এখন ভরসা পাইয়া পুরাতন ভূত্য মাথা চুলকাইয়া বলিল “ব্যাপারটিতে বড় সোজা নয় গড়িয়েও গেল অনেকথানি —” “ভূমিকায় দরকার নাই, যা হয়েচে ত৷ তুমিও দেখছ, আমিও দেখতে পাচ্চি ; যা হবে সেইটেই এখন সবাই ভাবে ।” “হবে,—হঁ্য তাই তো ভাব হচ্চে—ত আমি ওদের ঘরে ডেকে অনিচি” হরচন্দ্র সরিয়া পড়িল । পরীক্ষণে বাসন্তীর মাতামহ, শিশিরের পিতা ও দেশের গণ্যমান্ত দলপত্তি ও পরামর্শদাতাগণ অনেক ছন্দোবন্দে অন্তরালে সমাগত গৃহিণীকে জানাইলেন যে র্তাহার ঘরের কলঙ্ক নিজেদেরই মনে করিয়া এ পর্য্যস্ত তাহার চুপ করিয়া