পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭৬৬ ভারতী সেই হারাণে কমলা ! সেকি তাহার মুখ চাহিয়াছিল ? কেন তবে শচীকান্তই নিজেব এই সৰ্ব্বনাশ করিবে ? না ইহা কর্তব্য নয়, সে ভূল বুঝিয়াছিল, সে কিছুই প্রকাশ কবিবে না, করালীচরণ (য ইঙ্গিত দিয়া গেল সেই মতই কাজ করিয়া যাহাব জন্ত সে সৰ্ব্বত্যাগী হইয়াছে তাহাকে লাভে ধন্ত হইবে । কেন সে তাহার একমাত্র মুখের আলোক নিজের অন্ধকার চিত্তে জালাইতে এত দ্বিধা কবিতেছে ? কোন সঙ্কোচের কারণ বর্তমান নাই, সে-ই বরং তাহাকে ফাকি দিয়াছিল ! এতক্ষণে আসন ছাড়িয়া সে একবাব উঠিয় দাড়াইল । বাহিরে তখন কোয়াসাব স্বস্ব আস্তরণ পুরু হইয়া সুপ্ত জগতের অঙ্গে শীত বস্ত্র বিছাইয়া রাখিয়াছে, আকাশেব একটি তারাও দেখা যাইতেছে না। সে মুক্তির নিশ্বাস লইয়া পুনশ্চ নিজের মনকে বল দিবার জন্ত, উৎসাহিত করিবাব জন্ত কহিল,—এই আমার প্রকৃত কৰ্ত্তব্য, নিজের প্রতি কৰ্ত্তব্য পালন প্রথমে না করিয়া অপরের কথা কেন পূর্বেই ভাবিতেছি । কিন্তু বেশিক্ষণ এভাবকেও সে যেন বাধিয়া রাখিতে সক্ষম হইল না, সেই নৈশ অন্ধকারে চন্দ্রহীন তাবাহীন হিমবসনাবৃত৷ বিধবা নিশপিনী যেন তাহার শীতল অঙ্গুলী তুলিয়া অলঙ্ঘ্য আদেশ স্ববে শব্দহীন গম্ভীর ভাষায় উচ্চারণ করিলেন “ব্ৰহ্মহামুচ্যতে লোকে মিত্রদোহি ন মুচ্যতে!” মহাশূন্তে সেই শাস্ত্রশাসন গম্ভীর ধ্বনিতে শব্দায়মান হইয়। রহিল, দশদিকে সেই নীতিবাক্য শ্রতিধ্বনিত হইতে লাগিল, শবাধীন যামিনীর তবে ? কীৰ্ত্তিক, ১৩২০ তৃতীয় প্রহবে, স্তব্ধতার প্রতিকেন্দ্রে সেই ভীষণ বাণী যেন কোন অশরীরি মহাপ্রাণীর অখণ্ডনীয় অভিসম্পাতেব দ্যায় জাগিয়া উঠিয়া একমাত্র শ্রোতাব প্রতি শির উপশিরার ভিতবে তুষার শীতলতা সঞ্চালিত কবিয়া দিল । বেঞ্চের পিঠে মাথ রাখিয়া ক্রমশ শচীকান্ত ক্লান্তিতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হইয়া পড়িল । কয় মূহুর্তের জন্ত তাহার সৰ্ব্ব যন্ত্রণার অবসান হইয়া গেল । যখন সে জাগিয়া উঠিল, শীতে তাঙ্গর সৰ্ব্ব শবীর জমিয়া আসিয়াছে, থেtল স্থানের ভোবের হওয়া ছুবীর মত হাড়েব মধ্যে গিয়া বিধিতেছিল। প্লাটফরমেব একটি মাত্র দেওয়াল-লাম্প অতি ক্ষীণলোক বিতরণ করিতেছিল, চারিদিকে তখনও একটা অস্পষ্ট অন্ধকারের রাজত্ব বিস্তৃত, নিস্তব্ধতার মধ্যে কোয়াসাদীর্ণ শিশিববিন্দু বৃষ্টির মত গাছের পাতা হইতে ঝরিয়া পড়ার টুপটাপ শব্দ যেন কোন শোকার্তা নারীর অশ্রুপাতের দ্যায় নব জাগরিত বায়ু শব্দের সহিত শ্রত হইতেছিল । ষ্টেশনেব মধ্যে অফিস ঘরে কাজ আরম্ভ হইয়াছে। সেখানে আলো জলি তেছে, বদ্ধ শাসির মধ্য দিয়া সে অালে বর্ণকরফেল পথের উপর পড়িয়া দুঃখীর দীর্ণ পঞ্জরের মত দেখাইতেছিল। দুএকটা লোক কম্বল মুড়ি দিয়া প্লাট ফরমে প্রবেশ করিল। একটা কুলী জোরে জোরে ঘড়িতে ঘা দিয়া পাচটা বাজাইয়া গেল, কোথা হইতে একটা কলের আহবান-বাশী উৰ্দ্ধ স্বরে বিশ্রামশয়ান কৰ্ম্মীদলের জাগরণ গীতি গাহিল। শচীকান্ত চোখ রগড়াইয়া এক মুহূৰ্ত্ত বিস্মিত দৃষ্টিতে চারিদিকে চাহিল—সে এখানে কেন ?