পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭শ বর্ষ, সপ্তম সংখ্যা করিতে চাহিল। কিন্তু আবার সেই কিন্তু? মানবের চির-শত্ৰ, সৰ্ব্ব মঙ্গল কৰ্ম্মের বিপ্লসাধক সেই “কিন্তু বলিল,—করিতেছ কি ? এত সহজে তোমার আকিঞ্চনের ধনকে ভুলিয়৷ যাইবে ? ধীরে সে উত্তর করিল “কি মনীশ !” মনীশ বলিল “তুমি আমার শরীবের কথা ভাবচে নিজের চেহারাটা যদি আয়না ধরে দেখ ! এমন হয়েচ কেন ? মনে হচ্চে যেন কতদিন খাওনি, ঘুমোওনি।” বাস্তবিকই মানসিক সংগ্রামে অনিয়মে শচীকান্তকে চেন দুষ্কর হইয়া উঠিয়াছে । সে মুখ নত কবিয়া বিজড়িত কণ্ঠে কহিল, “একটু অনিয়ম গেছে কি না। কদিন কলকাতায় ওবা সার্কাস থিয়েটাবে, ধরে নিয়ে গেছল,—” “তুমি কলকাতা গেছলে ?” হঁ্য সেখানেই তো জানলাম তুমি বাড়ী এসেছ, হঠাৎ বাড়ী চলে এলে যে ?” মনীশ বন্ধুর সহসা আগমনের গৃঢ় কারণ এইবার স্পষ্ট বুঝিয়াছে। মনে করিল কলিকাতায় মনীশের পুরাতন প্রীতির অযুত স্মৃতি তাহার হৃদয়ে অনুতাপ জাগাইয়া দিয়া আজ আবার তাহার বন্ধুকে তাহার বক্ষে ফিরাইয়৷ দিয়ছে। সে মহানগরীর উদ্দেশ্রে তাহার হৃদয়ের শত ধন্যবাদ প্রেরণ করিল। আনন্দে সে অকারণ হাসি হাসিয়া উত্তর করিল “হঠাৎ কই ভাই, ছুটির সময় সত্য এলো আমিও তাই এসেছি। সেখানে আমার নৈশ পাঠশালা চলচে কিছু শুনলে ?” শচীকান্ত আবার যেন একটা স্বস্তি বোধ করিল “হ্যা শুনলাম বই কি, বেশ চলচে। বড় দিনের ছুদিন শুধু বন্ধ ছিল, সে ছুদিন ওরা বাগদত্ত! has ইন্দুভূষণকে শুদ্ধ থিয়েটাবে ধরে নিয়ে গিয়েছিল ।” মনীশ হাসিতে লাগিল “ওদের সঙ্গে আমি ছাড়া আর কেউ পাবে না, তুমি এখন দুদিন থাকবে তো ? বেশ বই লিখেচ ।” শচীকান্ত এই কথায় একটু যেন চঞ্চল হইয়া উঠিল। বাহিরে ব দিকে চাহিয়া সে অপরাধী ভাবে উত্তব কবিল “আমি কাল সকালেই যাবো–পাচটার ট্রেনে, তোমার সঙ্গে আর হয়ত দেখা হবে না —” মনীশ সবলে তাহার হাত চাপিয়া ধবিয়া বলিল “ঈস্ যেতে দিলুম বলে, এত তাড়া কেন শুনি ?” শচীকান্তের ললাট হইতে চিবুক অবধি রঞ্জিত হইয়া উঠিল, সে মাথা নীচু কবিয়া ছাড়া ছাড়া ভাবে কহিল “সেখানে একটা বড় জরুরী কাজ ছিল, যদি মাসিমা মনে করেন কাজের ভয়ে পালিয়ে রইল—” মনীশ তাহার হস্ত শিথিল করিয়া তৎক্ষণাৎ কহিয়া উঠিল “ওঃ তাহলে তো আব কথাই চলে না।” শচীকান্ত একটা গভীব নিশ্বাস পরিত্যাগ করিল, ছাড়া পাইবার মুহূর্তে তাহার সহস৷ মনে হইল, মনীশ তাহাকে তাহার মায়াজলে জড়াইয়া নিজের কাছে জোর করিয়া ধরিয়া রাখিলে ভাল করিত, কেন মুক্তি দিল ! কিন্তু তখন এ চিন্তার অবসর ছিল না এখনও তাহার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইতে বাকী আছে। কিন্তু কিসের পরীক্ষা, মনীশের মুখে সেই হাসি, কণ্ঠে সেই অক্ষুণ্ণ প্রসন্নতা, দৃষ্টিতে তেমনি উদার মহত্ব সুব্যক্ত, আহত হৃদয়ের ক্ষত চিহ্ন কোনখানেই শোণিতপঙ্কলিপ্ত