পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২০.djvu/৫৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭শ বর্ষ, দ্বাদশ সংখ্যা পড়িল । আকস্মিক উত্তেজনায় একটা কাজ করিয়া ফেলিয়াছিল, কিন্তু এতক্ষণে দারুণ একটা অবসাদে সৰ্ব্ব শরীরমন যেন ভাঙ্গিয়া পড়িতেছিল। একবার মনে হইল সেই তরঙ্গের মাঝখান হইতে আজ আর মাথাটা না টানিয়া তুলিলেই চুকিয়া যাইত । সে বসিয়া ভাবিতে লাগিল! আকাশের দিকে চাহিয় তাহার মনে হইল এই যে মহান তেজবাশি জগতেব প্রাণস্বরূপ স্বৰ্য্য ইহাব শক্তিও ক্ষণেকেব জন্ত প্রতিহত হইয়া থাকে, কিছুই বাধাহীন নয়, তবে আমি কতটুকু ?” সহসা সে শিঙ্গবিয়া শুনিল, কে যেন পশ্চাতে বলিয়া উঠিল "এ কি ৷” কমলা মুখ ফিরাইল, দুর্গে। একি দৃষ্ঠা আবার দেখাইলে ? গঙ্গাতীরে তবে সে স্বপ্ন নয় ; সর্তাই সে তবে এখানে আসিয়াছে ? নিশ্চল প্রায় চরণ বহুচেষ্টায় উঠাইয় স্তম্ভিত মনীশ ঈষৎ অগ্রসর হইয় সেই শুভ্র বসনা বিধবার সম্মুখে দাড়াইল, ক্ষণেক পরে বিস্ময়মথিত মৃদুস্বরে কহিল “তুমি এখানে ? এ বেশে কমলা !” e কমলা, উঠিয়া ছুটিয়া এখান হইতে চলিয়া যাইবার চেষ্টা করিল, কিন্তু অবসর শরীর মন তাহাতেও সায় দিল না। অনেকক্ষণ পরে মনীশ আবার তেমনি সন্দেহবিস্ময়ে মৃত্নতর কণ্ঠে কহিল, “চিনতে পারছে না কমলা, আমি মনীশ, তোমার এ বেশ কেন ? মনীশ তাহাকে এত সহজে সম্বোধন করিতে পারিল ? শচীকাস্তের স্ত্রী বলিয়া কি এ আত্মীয় ভাব ! সীসা গলিয়া অঙ্গে পড়িলে যেমন অসহ জালায় দেহ জলিয় উঠে ৰাগদত্তা >&br" নিজের অকস্মাৎ পতিত অশ্রুবিন্দুতে তাহার কোমল গণ্ড তেমনি জ্বালা করিয়া উঠিল। সে বিন্দু ছুটি দ্রষ্টার চক্ষে অদৃশু রহিল না, “বুঝেছি সে নাই। তাই সংবাদপত্রে ডেপুটি শচীকান্তের অসাধারণ আত্মোৎসর্গের কাহিনী শুনিয়াছিলাম। বিশ্বাস করি নাই যে সেই সে ;– আমার বন্ধু চিরসুহৃদ আর নাই চলিয়া গিয়াছে। মনীশের কণ্ঠ রোধ হইয়া গেল!” কিন্তু তাহার শোকপূর্ণ কণ্ঠ কমলাব বক্ষে অশনি প্রহার করিয়াছিল। সে বাবেক বিহবল নেত্রে তাহার মুখের পানে চাহিল । কে এই কথা বলিতেছে ! বন্ধু ! চিরসুহৃদ। যে তাহার জীবনের সকল বাসন কামনা ভস্ম করিয়া প্রাণটাকে এই রুদ্র মরুভূমি মাত্রে পরিণত করিয়া ছাড়িয়া দিয়াছিল, বন্ধুপ্রেমে একান্ত বিশ্বাসঘাতক, সে তাহার বন্ধু ! সুহৃদ ! অভাগিনী কমলা কাহার প্রতীক্ষায় তুই বসিয়াছিলি ? আজও কাহাব স্মৃতি তোর সত্য সঙ্কল্পে পদে পদে বাধা দিতেছে । সে কি এই তার প্রতি আকর্ষণহীন বন্ধুপ্রেমিক মনীশ ! দেখা হইয়াছে—বুঝি ভালই হইল।” বহুক্ষণ পরে মনীশ ব্যথাকাতর দৃষ্টিতে কমলার দিকে চাহিয়া বলিল “তুমি হয়ত এখন আশ্রয়হানা ? কোথায় কার কাছে আছ ? খুড়িম এখানে এসেছেন তার কাছে যাবে কি ? আমরা এই কতক্ষণ মাত্র এখানে এসে পোছেচি । আমি আজ পিতৃহীন, কাকাবাবু আমার এ জগতে নাই। খুড়িমা তোমায় পেলে মুখী হবেন।” কুমলা এ কথা শুনিয়া আগ্রহে মাথা তুলিল, তারপর সাশ্রনয়নে ঘাড় নাড়িল “না।”