পাতা:ভারতী কার্তিক-চৈত্র ১৩২১.djvu/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এসিয়িক ও য়ুরোপীয় সভ্যত এইরূপ মনে হইতে পারে, এসিয়িক ও যুরোপীয় সমাজের মধ্যে যখন এতটা বৈসাদৃশু, তখন উহাদের পার্থক্য আরও বৰ্দ্ধিত হইবে । কিন্তু তাহ হয় নাই। উনবিংশ শতাব্দীতে সমগ্র এসিয়া, যুরোপের প্রভাবে রূপান্তরিত হইল । কিরূপে এই পরিবর্তন সংঘটিত হইল, তাহা অনুসন্ধান করা যাউক । কুলপরম্পরাগত শ্রেণীবিভাগ, ঐতিহ্যের প্রতি অতিমাত্র ভক্তি, স্বেচ্ছাচারমূলক শাসনতন্ত্র—এই সকল জরাজীর্ণ উপাদান এসিয়িক সভ্যতার মধ্যে আবদ্ধ ছিল । কিন্তু কোন সভ্যতার চরম-গতি এবং সেই সভ্যতার অধিকারী লোকদিগের দশ ঠিক্‌ এক নহে। কোন এক সভ্যতা—একটি সমষ্টিবিশেষ; জীবন্ত ব্যক্তিদিগের সহিত, পুরাকালীন লোকদিগের রীতিনীতি, প্রতিষ্ঠান, ও সমস্ত কীৰ্ত্তিকলাপ, জীবজন্তু, দেশ, আবহাওয়া—সমস্তই ঐ সভ্যতার অন্তভূর্ত । সভ্যতাপ্রবর্তক কোন জাতির অবনতি সত্ত্বেও, সেই জাতির প্রবর্তিত সভ্যতা টিকিয়া আছে ও সতেজে বদ্ধিত হইতেছে অনেক সময় দেখা যায়। অন্ত জাতি আসিয়া সেই অবনতিগ্রস্ত জাতিদিগের ইনি অধিকার করে। এই প্রকারে, আধুনিক যুরোপের নব্য জাতির, প্রাচীন কালের জাতিদিগের স্থান অধিকার করিয়াছে । আবার অনেক সময় এমনও দেখা যায়, কোন সভ্যতা কলুষিত হইয়া পড়িয়াছে, অথচ যে জাতির দ্বার। ঐ সভ্যতা গঠিত হইয়াছিল, সেই জাতির তরুণ-ভাব বিনষ্ট হয় নাই। সেই জাতি জীবন-উদ্যমে পুর্ণ রহিয়াছে। এই সকল জাতি নুতন রীতিনীতি ও মতবিশ্বাস অসঙ্কোচে গ্রহণ করে ; তাহার দৃষ্টান্ত ঃ– সীজারের শাসনাধীনে গলেরা, অষ্টাদশ শতাব্দীর রুষের, ১৮৬৯ হইতে জাপানীরা ; এবং এই জাপানীদের দৃষ্টান্তে অন্তান্ত এসিয়িক জাতিও, অনিষ্টজনক প্রাচীন প্রথা সকল পরিত্যাগ করিয়া নবজীবন লাভ করিবে । উক্ত জরাজীর্ণ উপাদানগুলির সঙ্গে, এসিয়িক সভ্যতার মধ্যে কতকগুলি ফলপ্রস্থ উপাদানও আছে । কিন্তু উহাদিগকে ফুটাইয়া তুলিবার জন্ত কতকগুলি নুতন অবস্থা ও ঘটনার সংযোগ আবশুক । প্রকৃত এসিন্ধিক-যুরোপীয় সভ্যতার আবির্ভাব ব্যতীত, ভারতের, জাপানের ও চীনের কতকগুলি প্রতিষ্ঠান কখনই পুর্ণ সার্থকতা লাভ করিবে না। ইংলণ্ডের অনুকরণ সত্ত্বেও, জাপানের নিয়মতন্ত্র শাসনপ্রণালী, স্বকীয় প্রাচীন প্রতিষ্ঠানাদিরই কাৰ্য্যকারণঘটিত পরিণতি। আমাদেরও শাসনতন্ত্র, ইংলণ্ডীয় পার্লামেণ্টের অনুকরণ হইলেও আমাদের "Etats Generaux” “এটা জেনেরো”ই রহিয়া গিয়াছে।