পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা। শক্তিশালী পুরুষের প্রভাবের সীমা ছিল না। তাহার পূৰ্ব্বে বা পরে এমন ভাবে ছাত্রদের জীবন নিজের সম্পূর্ণ আয়ত্তাধীন করিয়া কেহই গঠিত করিতে পারেন নাই । বস্তুভঃ বঙ্গের জ্ঞান ও নীতির ইতিহাসে তিনি একটি সম্পূর্ণ নুতন যুগ আনিয়াছিলেন। রামত স্থ, রামগোপাল, কৃষ্ণমোহন প্রভৃতি প্রসিদ্ধ চরিত্রের ভিত্তির মূলে ডিরোজিও । চতুর্থ শ্রেণীতে শিক্ষকতা করিলেও বিদ্যালয়ের প্রায় সকল বালকের সহিতই ডিরোজিও পরিচিত ছিলেন । এবং অপরাহ্লে রামগোপাল, রামতনু প্রভৃতি ছাত্রবৃন্দ ডিরোজিওর স্নেহে আকৃষ্ট হইয় গুরুগৃহে পানাহার ও বিবিধ প্রসঙ্গের আলোচনা করিতেন । সত্যের উপাসনা এবং স্বাধীন চিন্তার বিকাশ ডিরোজিওর জীবনের আদর্শ ছিল। ছাত্রদিগের প্রাচীন বিশ্বাস ও সংস্কারের অযৌক্তিকত তিনি এরূপ সরল ভাবে হৃদয়ঙ্গম করাইয়। দিতেন সে তাহদের চক্ষে ডিরোজি ও অভ্রান্ত মহাপুরুষের ন্তায় প্রতীয়মান হইতে লাগিলেন। কিন্তু ইহার একটি কুফল হইল এই যে, যাহা কিছু প্রাচ্য তাহাই হেয় এবং যাহা প্রতীচ্য তাছাই সাদরে গ্রহণীয় এইরূপ একটি ধারণ ছাত্রদের হৃদয়ে বদ্ধমূল হইয়া গেল। মেকলের কথামত র্তাহার *faste witson, “A single shelf of European books is worth the whole native literatures of India & Arabia. হিন্দু ধৰ্ম্ম সম্বন্ধে একটি ছাত্র প্রকাগু সভায় আপনার মত ব্যক্ত করিলেন “পৃথিবীতে যদি কোন জিনিসকে অন্তরের সহিত ঘৃণা করিত, সেট হিন্দু ধৰ্ম্ম।” রামতনু ও এই প্রতীচ্য রামতনু লাহিড়ী। & o & উপাসনার প্রবল স্রোতে ভাসিয়া গিয়াছিলেন। স্বরাপান ও সমাজনিষিদ্ধ অন্তান্ত ক্রিয় তখন র্তাহার নিকটও নিন্দনীয় ছিল না। ফলতঃ ডিরোজিওর শিষ্যত্ব গ্রহণ রামতনুর জীবনে একটি স্মরণীয় ঘটনা। সেই দিন হইতে তাহার বহুদিনের সঞ্চিত অন্ধ বিশ্বাসের উপর ধীরে ধীরে যে আঘাত পড়িতে আরম্ভ হইল তাহার ফলে তাহার জীবন সম্পূর্ণ নূতন পথ গ্রহণ করিল। হিন্দুসমাজের সংকীর্ণতা চুৰ্ণ করিয়া বিভিন্ন জাতির সহিত পানাহার করিতে র্তাহার উৎসাহের সীমা ছিলনা। শিক্ষক তার যশের জন্ত রামতনু তাহার গুরুর নিকট বহুল পরিমাণে ঋণী এবং তাহার ছাত্রদের প্রতি যত্ন ও স্নেহ ডিরোজিওর জীবনের অনুকরণ মাত্র । ডিরোজিওর সত্যানুরাগ রামতনুর জীবনের প্রত্যেক কার্যে উজ্জল ভাবে প্রতিফলিত । ১৮৩০ খ্ৰীষ্টাব্দে রামতনু কলেজ হইতে সসন্মানে উত্তীর্ণ হইয় ৩০ টাকা বেতনে হিন্দুকলেজের শিক্ষক নিযুক্ত হন। এই স্বল্প আয়ে তিনি নিজের ও ভ্রাতৃদ্বয়ের ব্যয় নিৰ্ব্বাহ এবং অনেক নিরাশ্রয় ব্যক্তিকে আশ্রয় দান করিয়াও দেশে পিতামা তাকে সাধ্যমত সাহায্য করিতে লাগিলেন। কনিষ্ঠ ও আশ্রিতদিগের প্রতি র্তাহার যত্নের সীমা ছিলনা। কনিষ্ঠ কালিচরণ বাবুর পরীক্ষার কয়েকমাস পূৰ্ব্বে চক্ষের পীড় হওয়tয় রামতনু বাবু প্রতিদিন কলেজের কার্য্যসমাপনস্তে গভীর রাত্রি পর্য্যস্ত ভ্রাতার পাঠ্যগ্রন্থ পড়িয় তাহাকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করিয়া দিতে সক্ষম হইয়াছিলেন। ১৮৪৬ খ্ৰীষ্টাব্দে কৃষ্ণনগর কলেজ স্থাপিত হইলে রামতনু বাবু স্কুল বিভাগের দ্বিতীয়