পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/২২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৪ জমাট বাধিয়া যাইত। স্কুল কলেজ সৰ্ব্বদাই ষ্টিম ইঞ্জিনের সাহায্যে গরম রাখা হইত। এরূপ প্রদেশে বাস করিতে কোন ভারতবাসীর প্রতিদিন প্রতি মুহুর্তে স্বদেশের কথা মনে না হয় ? এই একবৎসর অজ্ঞাত বসবাস বা দ্বীপীস্তর বাস সমাপ্তির পর যখন কয়েক বৎসর প্রায় ৩০৪০ জন ভারতবাসীর সহিত তোকিও সহরে বাস করিতেছিলাম তখনই কি কেহ স্বদেশের কথা ভুলিতে পারিয়াছিলাম ? আমার মনে হয় সেই সময়ই স্বদেশের জন্ত সকলে আরও ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছিলেন। কারণ সে সময় বঙ্গ বিচ্ছেদ স্বদেশী বয়কট প্রভৃতি আন্দোলনে ভারত আলোড়িত । চিঠিপত্রে এবং খবরের কাগজে জানা যাইত কাহার ভাই জেলে গিয়াছে, কাহার শুtলক হাজতে আছে, কাহার পিসে মহাশয় জরিমান দিয়াই অব্যাহতি পাইয়াছেন। কাছার পিতা সরকারী চাকুরী হইতে বরখাস্ত হইয়াছেন, কাহার কোন আত্মীয় পিউনিটিভ পুলিসের ঘষ্টি প্রহারে ক্লিষ্ট হইয়া হাসপাতালে আছেন ইত্যাদি । কাযেই অনেক বন্ধু এক সঙ্গে থাকিলেও তখন দেখিতাম যে স্বদেশ ও আত্মীয় স্বজনের জন্ত সকলেই নিরতিশয় চিন্তাগ্রস্ত। সাধারণতঃ সপ্তাহে একদিন ভারতের ডাক পাইতাম । উহাও প্রায় রাত্রি ১০টা হইতে ১১টার মধ্যে । নির্দিষ্ট দিনে অনেকেই ডাকের প্রতীক্ষায় থাকিতেন। তার পর ডাক পৌছিলে খবরের কাগজে মোটামুটি ঘটনাগুলি দেখিতে দেখিতেই কোন কোন দিন রাত্রি তিনটা বাজিয়া যাইত। ভারতবাসী डांब्रडौ । জীবনে শান্তি অতি বিরল। আষাঢ়, ১৩১৭ পরিচালিত হিন্দুস্থানের প্রায় সকল প্রদেশের প্রধান প্রধান সংবাদ পত্রই আমরা পাইতাম । এই সকল কারণে দেখিয়াছি যে প্রবাসী যে কর্তব্যের অনুরোধে বিদেশে থাকিতে হয় তাহার দায়িত্ব অতি গুরুত্তর। তার উপর আবার দেশ ও আত্মীয় স্বজনের চিন্তা ! বৈদেশিক সমাজে যখন আমরা ঘৃণিত জীবজন্তুর ন্তায় বিবেচিত হই এবং বৈদেশিক ংবাদপত্র সমূহ যখন আমাদের দেশের কেবল নিন্দ কুৎসাই গাহিতে থাকে তখন ইচ্ছা হয় না যে সে দেশে ক্ষণকালের জন্ত ও অবস্থান করি । তখন কি সেই দেশের প্রতি ঘৃণার ভাব এবং স্বর্গাদপি গরিয়সী জন্মভূমির প্রতি প্রীতির ভাব উদ্দীপ্ত হইয়া উঠে না ? জাপানেও আমাদের তেমনি হইত। জাপান আজ বড় হইয়াছে। পৃথিবীর প্রধান প্রধান জাতি উহাদের নিকট মস্তক অবনত করিতেছে তাই আজ জাপানীরা আমাদের ভারত্তের কিছুতেই সৌন্দর্য্য দেখিতে পায় না। আজ তাহারা স্তবস্তুতির পরিবর্তে ভারতবাসীর প্রতি কেবল গালি বর্ষণ করিতেই আনন্দ বোধ করে। যে জাপানীরা স্বদেশপ্রেমে মাতোয়ার এবং যাহার কাচারও মুখে জাপানের সামান্য কিছু নিন্দ শুনিলেই তাহাকে চিরশত্রু বলিয়া মনে করে, সেই জাপের দেশে অবস্থান কালে তাহাদের মুখে ভারতের নিন্দাবাদ শুনিলে আমাদেরই ব! তাহা প্রীতিকর হইবে কেন ? এই জন্তই জাপানজীবনে প্রত্যেক শিক্ষিত প্রবাসী ভারতবাসীর এমন একটি দিনও অতিবাহিত হয় না যেদিন তিনি র্তাহার স্বদেশের বিষয় কিঞ্চিৎ চিত্ত৷