পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভগৱতী ৩৪শ বর্ষ ] শ্রাবণ, ১৩১৭ [ ৪র্থ সংখ্যা ভারত ও বিলাত । বিলাত প্রবাসীর পত্র । দশ বৎসর পরে । এ আমার প্রথম বিলাত- প্রবাস নষ্ঠে । দশ বৎসর পূৰ্ব্বে, আর একবার এদেশে দুষ্ট বৎসরকাল কাটাইয়া গিয়াছি । কিন্তু সেকালে আর একালে বিস্তর প্রভেদ । আমার ভিতরে কত প্রভেদ, এদের বাহিরেই বা কত প্রভেদ ! এক দিন, সে নিতান্ত বহুদিনের কথা ও নয়—ইংরেজি-নবিশ ভারতবাসীর নিকট বিলাত পুণ্যভূমি ছিল । আমরা তখন নিজে দের সাহেব ক’রে তুলিবার জন্ত ও ভারতকে বিলাতে পরিণত করিবার জন্ত নিরতিশয় ব্যগ্র হইয়া পড়িয়ছিলাম । তখন বিলাতের সবই আমাদের চক্ষে ভাল ছিল, আর আমাদের সকলই মন্দ ছিল । ইংরেজের সমকক্ষ হইবার আশায় তখন আমরা বাঙলা বুলি ভুলিয়া ইংরেজি সু্যাঙ শিখিতে লাগিলাম, কুশাসন, গালিচা, সতরঞ্চ ছাড়িয়া টেবিল-চেয়ার ধরিলাম ; ধুতি চাদর ছাড়িয়া হাট কোট পরিলাম ; গৃহিণীকে গাউন পরাষ্টয়া ঘরের বাহির করিলাম ; সৰ্ব্ববিষয়ে ইংরেজ সাজিবার জন্য ব্যস্ত হইলাম। পোষাকে ও বুলিতে, চাল ও চলনে যে কালে সাদা হয় না, জাত বিজেতা হয় না, দাস প্রভু হয় না, এ জ্ঞান তখনে জন্মায় নাই । যখন ইংরেজের কৃপায় সে জ্ঞান জন্মাইল, তখন আমরা একেবারে উণ্ট সুর ভাজিতে আরম্ভ করিলাম। এক সময় যেমন বিলাতের সবই ভাল ও স্বদেশের সবই মন ছিল, এখন তেমনি স্বদেশের সবই ভাল, আর বিলাতের সবই মন্দ হইয়া উঠিল । অজ্ঞ ইংরেজ ভারতবর্ষকে যে চক্ষে, দেখে, এখন বিজ্ঞতাভিমানী ভারতবাসীও ইংলণ্ডকে সেইভাবে দেখিতে আরম্ভ করিলেন। ইংরেজের চক্ষে আমাদের সদাচার অশ্লীলতা, আমাদের সভ্যতা বৰ্ব্বরতা, আমাদের সৌজন্ত কাপুরুষতা, আমাদের ভক্তি অতিশয়োক্তি, আমাদের ধৰ্ম্ম কুসংস্কার, আমাদের দেশচর্য্য বিদ্রোহ। প্রতিক্রিয়ার মুখে, ভারতবাসীওঁ ইংরেজের সকল বিষয়ই এইরূপ মন্দ চক্ষে দেখিতে লাগিল। সে ভাব এখনো নষ্ট হয় নাই ; কত দিনে যে নষ্ট হইবে, কতদিনে যে ইংরেজ ও ভারতবাসী পরস্পরে পরস্পরকে সত্যভাবে দেখিতে ও বুঝিতে পারবে, ভগবান জানেন । * ... : :. . ;