পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৩৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, পঞ্চম সংখ্যা । তুলিয়াছিল ! জীর্ণ টিনের সেডথানি বর্ষার আক্রমণ হইতে আপনাকে যেন আর রক্ষা করিতে পারে না ! একটা প্রকাণ্ড বাশের ছাত মাথায় দিয়া, ষ্টেশনমাষ্টার অদূরস্থ বাগায় চলিয়াছিলেন, এমন সময়, এই অভাবনীয় অতিথিকে দেখিয়া চমকিয়৷ উঠিলেন । এমন স্থানে এমনটি দেখিবার আশা করাই যে বাতুলতা ! ষ্টেশনে একটা জমাদার ছিল—আর জনপ্রাণী ন! ! ষ্টেশনের নিম্নে জমি গুল জলে ভরিয়া গিয়াছে, তাহার মধ্য হইতে সরু পথ কোনমতে আত্মপ্রকাশ করিতেছে । আকাশের গতিক একটুও আশাপ্রদ নহে! বরং, রীতিমত আশঙ্কাজনক ! ষ্টেশনমাষ্টার কহিল, “মশায়, এখানে —আপনি—?” রমেন্দ্র কছিল, বিশেষ প্রয়োজনে এখানে সন্ত্রীক সে আসিয়া পড়িয়াছে। পথিমধ্যে এই দুৰ্য্যোগ ! সন্তোষপুর গোয়ালাপাড়ায় কলিকাতার হংসেশ্বর চৌধুরীর বাগানবাড়ী— সেখানে সে যাইবে ! জমাদার সে বাগান চিনিত । কহিল, “সে যে পোড়ো বাড়ী, বাবু!” মায়া ভড় কাইয়া গিয়াছিল ! ষ্টেশনে ওয়েটিং রুম নাই, এবং গাড়ী নাই, এমন দেশ, ইংরাজের আমলে কলিকাতার কাছে যে থাকিতে পারে, ইহা সে স্বপ্নেও ভাবিতে পারে নাই ! এ কোথায় আসিয়া পড়িয়ছে ? তবু স্ত্রীলোকের সকল বল-ভরসা যে স্বামী, তিনি নিকটে, এইটুকুই তাহার একমাত্র সাত্বন ! নহিলে সে এতক্ষণে র্কাদিয়া-কাটিয়া হুলস্থল বাধাইয়া তুলিত। রমেন্দ্র সন্ধান লইয়া জানিল, তাছার নামে বিছানার রসভঙ্গ । Woo লগেজ বা কোন লগেজ এখানে আসে নাই ! শুনিয়া সে স্তম্ভিত হইয় গেল। ইহার অর্থ কি ? ভিজা জিনিসপত্র-কতক ষ্টেশন-মাষ্টারের জিন্মায় রাখিয়া, কতক জমাদারের মাথায়" চাপাইয়া, স্বামী জলপথেই যাত্রা করিল। ষ্টেশনমাষ্টার মহাশয় একখানি পর্ণ-কুটিরে কোনমতে মস্তক রক্ষা করিতেন, কাজেই সেখানে আতিথ্যগ্রহণ একেবারে সম্ভাবনার বাহিরে ! মায়া বলিল, “বাড়ী ফিরে চল!” রমেন্দ্ৰ কহিল, “আবার ও কথা ? ছিঃ– এরা পাগল মনে করবে যে !” রমেন্দ্রেরও ফিরিবার সম্পূর্ণ ইচ্ছ, কিন্তু চক্ষুলজ্জা ত্যাগ করাও ত সম্ভব নহে ! (R পথে রমেন্দ্রের পাম্পন্ন ভিজিয়া আপনার জুতা-জন্ম বিসর্জন দিবার উপক্রম করিল ! জলে হাটিয়া বাসায় পৌছাইয়। রমেন্দ্র জমাদারকে বখশিস দিয়া বিধায় করিল। হরিকেন লণ্ঠনটিকে কোনমতে জ্বালাইয় রমেন্দ্ৰ দেখিল, গৃহটি চামচিকার আবাসস্থল । অরেগুল-মাকড়সা প্রভূতিরো অস্ত নাই ! ছাদ দিয়া ঘরের মধ্যে বেশ জল পড়ে । একথানি ভগ্ন পালঙ্কমাত্র অতীত গৌরবের শেষ স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ পড়িয়া রহিয়াছে, তাহার একখানি পদ অদৃপ্ত ! পাঁচ-ছয়খানি ইষ্টকখণ্ডে পালঙ্ক আপন পদমর্যাদা কোনমতে রক্ষা করিয়াছে ! কাব্যরসজ্ঞ হইলেও রমেন্দ্রনাথ ক্ষুধার সময় আহার না পাইলে অস্থির হইয় পড়ে ! এইটুকুই তাহার বিশেষত্ব ! কিন্তু তাহারে যেমন দুর্ভাগ্য, একটা হাড়ির মধ্যে কয়েকখান।