৩৪শ বর্ষ, পঞ্চম সংখ্যা । ঠাকুর, আমার একটা মাত্তর মেয়ে ওকে নিয়েই আমার সংসার,---ওর যাতে সংসারের ওপোর মন হয় তাই কর ঠাকুর, তাই কর।” ঠাকুব কি অলক্ষ্যে থাকিয়া হাসিয়া বলিয়াছিলেন “তথাস্ত”। ( ه 0 ) নদীটি নিতান্ত ছোট না হইলেও খুব বড় নয় । বর্ষায় পাহাড়ের জল নমিয়। যেমন পূর্ণ দেখাইত শীতের আরম্ভে তাহার অৰ্দ্ধেক কমিয়া গিয়া তীরের মুড়ি শামুক ও বেলেমাটির অনেক দূর পর্য্যস্ত বাহির হইয় গিয়াছে। পরিষ্কার জলের নীচে বাতাদের হিল্লোলে জলের সঙ্গে সঙ্গে বালির উপর নুড়িগুলি পৰ্য্যস্ত যেন কঁাপিয়া উঠিতেছে ; তীরে মৃদু ঢেউগুলি ক্রীড়াচ্ছলে আঘাত করিতে করিতে অস্ফুটবাকৃ শিশুর মত আধ আধ কলকণ্ঠে টলিয়া পড়িতেছে । স্নেহময়ী জননী ধরিত্রী কখনও সোহাগের আলিঙ্গন কখনও অভিমানের ক্রন্দন কধনও ক্রোধের নিফল তাড়না আচঞ্চল হাসিমুথে চিরদিন ধরিয়া গ্রহণ করিতেছেন,—বিকার নাই বিরাগ নাই মাতৃ মেহের মতনই তাই অকুষ্ঠিত, সহিষ্ণুতাপূর্ণ ও দ্বিধাহীন । মা জননীর জননী ! তোমার ঐ নীরব স্নেহধারায় অভিষিক্ত হইয়৷ পলে পলে কতখানি গ্রহণ করিতেছি তাহার কতটুকুই বা আমরা ভাবিয়া দেখি মা ! নদীর নাম বিরুপাক্ষী ! বিরুপাক্ষীর পুৰ্ব্বতীরে একটি নুতন বাধান ঘটে। উপরে আম নারিকেল প্রভৃতি ঘন বিদ্যস্ত বৃক্ষশ্রেণীর মধ্য দিয়া একটি মাঝারি রকম দোতলা বাড়ি দেখা যাইতেছিল। পূৰ্ব্বে এইখানে একজন নীল পোষ্যপুত্র । రిసి কর সাহেবের কুঠি ছিল, তারপর বাঙ্গল দেশ হইতে নীলের চাষ উঠিয়া গেলে সাহেব কুঠি তুলিয়া দিয়া দেশে গিয়াছেন। সেই পৰ্য্যন্ত এখানে কেহ বাস করে নাই । বাগানটা জঙ্গলে ও বাড়িটা ভগ্ন স্তুপে পরিণত হইবার আর খুব বেশি দেরী নাই— এমন সময় বিরুপাক্ষীর নৌকা-যাত্রীর কৌতুহল পুর্ণ দৃষ্টির উপর দেখিতে দেখিতে বাড়িখানা মেরামত হইয়া ঝকঝকে হইয়া উঠিল এবং বাড়ীর আশেপাশের জঙ্গলও দিব্য একটি সুন্দর ফুলবাগানে গড়িয়া উঠিল। নদীতে বর্ষায় ভিন্ন অঙ্গ সময়ে নৌকাও বেশি চলিত না । কিন্তু যাহারা সেপথে যাতায়াত করিত আশ্চৰ্য্য হইয়া মুগ্ধনেত্রে নব নিৰ্ম্মিত উষ্ঠানে ক্রীড়পরায়ণ বালকগুলির দিকে চাহিয়া দেথিত । দেখিত ছেলেরা নিজের হাতে মাটি নিড়াইতেছে, নিজের হাতে জল আনিয়া থাইতেছে, নিজেরাই গাছ কাটিতেছে, আবার ফুল তুলিয়া, মালা গাথিয়া, তোড়া বাধিয়া, পরম্পরকে দান করিয়া, লাফাইয়া খেলিয়া, হাসিতে কথা ৯ নির্জন নদীতটে স্বপ্নরাজ্য রচনা করিতেছে। নিজ্জাবতম প্রশাস্ত বালকগণ স্নান পাণ্ডুর মুখে তাহাদের দিকে চাহিয়া ভাবিত, তাহারা কি আরব্য উপন্যাসের মধ্য হইতে বাহির হইয়! সদ্য এখানে আসিয়া পৌছিয়াছে ? মৃত্তিক কলসে জল আহরণ বেড়াবাধা হইতে সমকণ্ঠে সন্ধ্যাবন্দন, সংস্কৃত শ্লোকাবৃত্তি মুগ্ধযাত্রীগণের বিস্মিত চক্ষে পুবাকালিন পুণ্যাশ্রমবাসী ঋষিকুমারগণের সৌম্যমুন্দর তরুণ মূৰ্ত্তি অঙ্কিত করিয়া তুলিত। কোন কোন প্রবীন ব্যক্তি মুগ্ধকৰ্ণে “চিদানন্দরূপ শিবোহং শিবোহুং”
পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৪১০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।