VDసెని শুনিতে শুনিতে অশ্রুবিগলিত গদ গদ স্বরে বলিয়া উঠিতেন “ আবার হবে রে, আবার আসবে, সেদিন আবার ফিরে আসবে।” নিকটে দ্বিতীয় লোকাবাস নাই, বাগানের পশ্চাতে দু-একটা সরিষাক্ষেত্র পার হইলে গ্রামের সীমান চোখে পড়ে ও কোলাহলধ্বনি কর্ণে প্রবেশ করে । সকালে সন্ধ্যায় কিন্তু সেই নির্জন তট হাসির কাশীর কলহের ও ইষ্টমন্ত্র পঠনের ক্ষুদ্র বৃহৎ অনেক প্রকার শব্দদ্বারা মুখরিত হইতে থাকিত । গ্রাম্য শিশুগণের বাহু দ্বারা তাড়ন। প্রাপ্ত ঘুমন্ত তরঙ্গ শিশুগণ ছলছল কলকল শব্দে কাদিয়া কাদিয়া উছলাইয়া পড়িত । নদী সুন্দরীর সুন্দর প্রতিবিম্ব বক্ষে ধারণ করিয়া কৃতজ্ঞতা স্বরূপে শীতলতা দান করিত ; বৃন্ধীর ভক্তি জলাঞ্জলি ইষ্টদেবতার চরণে নীরবে অৰ্পণ করিয়া মানবের মুখদুঃখের নিত্য ভাগ গ্রহণ করিত। তার পর নদীতীরের গাছগুলি যখন দীর্ঘচ্ছায়া জলে ফেলিয়। উত্তপ্ত ক্লাস্ত শ্বাস ফেলিতে থাকে এবং আমবাগানের মধ্য দিয়া নিমগাছের ছায়াবহুল ঘন শাখা পল্ললে ঢাকা শীতল অঙ্ক দিয়া, বটফলবিছানে সেফালিকা ছড়ানে আঁকাবাক৷ পথ দিয়া, তাবিজ লঙ্গফুল কলসীর গাত্রে বাজাইয়া, সিক্তবসন হান্তাধরা গ্রাম্যবধূরা পরস্পরে সুখদুঃখের আলোচনা করিতে করিতে গ্রামের ভিতর ফিরিয়া যায় ও গ্রামের কৃষাণযুবকগণ কাঁচালঙ্কা ও লবণের সাহায্যে বাসীভাতে উদর পূর্ণ করিয়া প্রফুল্ল চিত্তে বাগানের উত্তর দিকে ফিরিয়া মোট মুর হাকিয় ক্ষেতের পথ ধরে, সেই সময় এই নির্জন নদীতীর যোগ ভারতী । ভাদ্র, ১৩১৭ শ্রমের মতন নিস্তব্ধ হইয়া যায় । নিঃশব্দ প্রকৃতি র্তাহার শাস্ত করুণ চোখ দুখানির পাত মুদিয়া বিশ্রাম শয়নে যেন বালিকার মতন ঘুমাইয়া থাকেন, রৌদ্রতপ্ত বাতাস নিবিড় বৃক্ষচ্ছায়ায় স্নিগ্ধ হইয়া আসিয়া ললাটে মৃহ মৃদু হাত বুলাইতে থাকে, দুর শস্তক্ষেত্র হইতে বা ছায়ানিবিড় বটবৃক্ষ তলস্থ বিশ্রাম শয্যা হুইতে কচিৎ কোন একটা পরিচিত রাগিণীর একটি চরণ আকুল করুণ সুরে ভাসিয়া আদিতে থাকিলেও সেই বিশ্রাম মুথের কিছুমাত্র ব্যাঘাত জন্মায় না। শু্যামল লতাগুন্মের ফাকে ফাকে স্বৰ্য্যালোক ঝিলমিল করিয়া সকৌতুকে উকি দিয়া রাঙ্গামুখে চাহিয়া চাহিয়া সরিয়া যায়। মুখের উপর রেখাপাত করিতে যেন সাহসী হয় না। ঝোপের মধ্যে লুকাইয় পাখীরা কুঞ্জন করিয়া উঠিলে বাতাস একটু চঞ্চল হইয়া উঠিয়া ঘনঘন নিশ্বাসে তাহদের সতর্ক করিয়া দিয়া আবার নিজের সস্নেহ পরিচর্য্যা গ্রহণ করিয়া ধীরে ধীরে বহিতে থাকে। কোলের ছেলেটিকে ঘুম পাড়াইয়া মা যেমন সতর্কমেহে সজাগ হইয়া থাকেন সেও যেন তেমনি করিয়া জাগিয়া মাথার কাছে বসিয়া আছে । কোথাও একটা সাড়া পাইলে নিশ্বাস টানিয়া উৎকর্ণ হইয়া ফিরিয়া চাহে ও নিঃশব্দে তর্জনি তুলিয়া নিবtয়ণ করিয়া থামাইয়া দেয়। কিন্তু বিপ্রহরের নিস্তব্ধ প্রকৃতির বিশ্রাম মুখ অব্যাহত রাখিয়াও সেই শান্ত তপোবনের মধ্যস্থ গৃহ তইতে একটা ফুট অফুট শব্দলহরী তাহার স্তব্ধ তার কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিত থাকিয়া সুদূর মধু-চক্ৰে মধুমক্ষিকার গুঞ্জনের মতন একট
পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৪১১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।