পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, পঞ্চম সংখ্যা । কেই যদি তোমাদের প্রকাশ করবার ইচ্ছা হয়ে থাকে তাহলেই এই উৎসব সার্থক । তোমাদের জীবনের সঙ্গে আমার জীবন যদি বিশেষভাবে মিলে থাকে, আমাদের পরস্পরের মধ্যে যদি কোন গভীরতর সম্বন্ধ স্থাপিত হয়ে থাকে তবেই যথার্থভাবে এই উৎসবের প্রয়ো জন আছে, তার মূল্য আছে । এই জীবনে মামুষের যে কেবল একবার জন্ম হয় তা বলতে পারিনে। বীজকে মরে অন্ধুর হতে হয়, অঙ্কুরকে মরে গাছ হতে হয় —তেমনি মানুষকে বারবার মরে নূতন জীবনে প্রবেশ করতে হয় । একদিন আমি আমার পিতামাঙার ঘরে জন্ম নিয়েছিলুম—কোন রহস্তধাম থেকে প্রকাশ হয়ে ছিলুম, কে জানে ! কিন্তু জীবনের পালা, প্রকাশের লীলা সেই ঘরের মধ্যেই সমাপ্ত হয়ে চুকে যায় নি । সেখানকার সুখহঃখ ও মেহপ্রেমের পরিবেষ্টন থেকে আজ জীবনের নুতনক্ষেত্রে জন্মলাভ করেছি। বাপমায়ের ঘরে যখন জন্মেছিলুম তখন অকস্মাৎ কত নুতন লোক চিরদিনের মত আমার আপনার হয়ে গিয়েছিল । আজ ঘরের বাইরে আর একটি ঘরে আমার জীবন যে জন্মলাভ করেছে এখানেও একত্র কতলোকের সঙ্গে আমার সম্বন্ধ বেঁধে গেছে ! সেই জন্তেই আজকের এই আনন্দ । আমার প্রথম বয়সে, সেই পূৰ্ব্বজীবনের মধ্যে আজকের এই নবজন্মের সম্ভাবনা এতই সম্পূর্ণ গোপনে ছিল যে তা কল্পনারও গোচর হতে পারত না । এই লোক আমার কাছে অজ্ঞাত লোক ছিল। জন্মোৎসব। ৩৯৭ সেই জন্তে আমার এই পঞ্চাশ বৎসর বয়সেও আমাকে তোমরা নুতন করে পেয়েছ ; আমার সঙ্গে তোমাদের সম্বন্ধের মধ্যে জরাজীর্ণতার লেশমাত্র লক্ষণ নেই। তাই আজ সকালে তোমাদের আনন্দ উৎসবের মাঝখানে বসে আমার এই নবজন্মের নবীনতা অন্তরে বাহিরে উপলব্ধি করচি । এই যেখানে তোমাদের সকলের সঙ্গে আমি আপন হয়ে বসেছি এ আমার ংসারলোক নয়, এ মঙ্গললোক। এখানে দৈহিক জন্মের সম্বন্ধ নয়, এখানে অহেতুক কল্যাণের সম্বন্ধ । মামুষের মধ্যে দ্বিজত্ব আছে ; মানুষ একবার জন্মায় গর্ভের মধ্যে, আবার জন্মায় মুক্ত পৃথিবীতে। তেমনি আর একদিক দিয়ে মামুষের এক জন্ম আপনাকে নিয়ে, আর এক জন্ম সকলকে নিয়ে । পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়ে তবে মানুষের জন্মের সমাপ্তি, তেমনি স্বার্থের আবরণ থেকে মুক্ত হয়ে মঙ্গলের মধ্যে উত্তীর্ণ হওয়া মনুষ্যত্বের সমাপ্তি। জঠরের মধ্যে ভ্রণই হচ্চে কেন্দ্রবত্তী, সমস্ত জঠর তাকেই ধারণ করে এবং পোষণ করে, কিন্তু পৃথিবীতে জন্মমাত্র তার সেই নিজের একমাত্র কেন্দ্রস্ব ঘুচে যায়-এখানে সে অনেকের অন্তৰ্ব্বত্তী। স্বার্থলোকেও আমিই হচ্চি কেন্দ্র, অন্ত সমস্ত তার পরিধি, মঙ্গললোকে আমিই কেন্দ্র নই, আমি সমগ্রের অন্তৰ্ব্বত্ত ; স্বতরাং এই সমগ্রের প্রাণেই সেই আমির প্রাণ, সমগ্রের ভালমন্দেই তার ভালমন । পৃথিবীতে আমাদের দৈহিক জীবন একেবারেই পাকা হয় না। যদিও মুক্ত আকাশে