পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ন, পঞ্চম সংখ্যা । আমি কছিলাম, “বেশ, আমি ও প্রস্তুত— চল!” তাহারা কহিল, আধ ঘণ্টার মধ্যেই যাত্র করিতে হইবে । তার পর সকলে বাহির হুইয়া গেল । এখন একবার শেষ চেষ্টা ! ভগবান, সত্যই কি কোনো আশা নাই ? পলাইব, নিশ্চয় আমি পলাইব । দ্বার, জানালা, ছাদ ভেদ করিয়া, যেখান দিয়া পারি, পলাইব ! দেহের মাংসগুলাকে রাখিয়া যাইতে হয়, যদি, তবু এই অস্থিকয়খানা লইয়াই পলাইব । কোথায় এখন যন্ত্র—অস্ত্র ? রাক্ষসের মত বলে ও উদ্যমে যন্ত্রপাতি লইয়া যদি লাগিয়৷ যাই, তথাপি এ দেয়াল ভাঙ্গিতে একমাস সময় লাগিবে ] কিন্তু আমার হাতে একটা পেরেক অবধি নাই—হারে দুরাশা— একান্ত দুরাশ ! ミo কঁসিয়ারজারির জেলে আমি আসিয়াছি । নিজের ইচ্ছায় নয়—সতর্ক প্রহরীবেষ্টিত বন্দী অবস্থাতেই আসিয়াছি। পথের কথাটুকু বলিবার মত । সাড়ে সাতটার সময় আমার প্রহরী আসিয়া সেলাম করিয়া কহিল, “সঙ্গে আমন, মশায় !” আদব-কায়দার কোন ক্রটি নাই। আমি উঠিয় তাহার অমুসরণ করিলাম। মাথা এমনি ভার বোধ হইতেছিল, আর পী হুইট এত দুৰ্ব্বল—যে চলা যায় না ! তবু চেষ্টা করিয়া চলিলাম। বাহির হইতে একবার আমার নির্জন ঘরটির দিকে চাহিলাম—এতদিনের আশ্রয় -কেমন একটা মায় পড়িয়া গিয়াছিল। আজ তাহা শূন্ত রাখিয়া চলিলাম,—কি বিচিত্র, এ দৃশু ! কিন্তু চয়ন-বনী । & X\to অধিকক্ষণের জন্ত নয়--সন্ধ্যার সময়, আবার এক নুতন অতিথি আসিয়া শুষ্ঠ ঘর পূর্ণ করিবে ! ধন্ত বিধান ! প্রাঙ্গণের সম্মুখেই আচাৰ্য্য বসিয়াছিলেন— তিনি তার আহারটুকু শেষ করিতেছিলেন । জেল-কর্তা আমার করকম্পন করিলেন--- তারপর চারিজন সশস্ত্র প্রহরী দ্বারা বেষ্টিত হইয়া আমি চলিলাম। হাসপাতাল হইতে একটি লোক অভিবাদন করিল। তখন আমি মুক্ত প্রাঙ্গণের মধ্যস্থলে আসিয়া দাড়াইয়াছি । নিশ্বাস ফেলিয়া বঁচিলাম ! কিন্তু, কতক্ষণের জন্য ?” বাহিরে গাড়ী দাড়াইয়াছিল। সেই গাড়ী-যাহার মারফত এখানে আসিয়াছিলাম। লম্বা গাড়ী, ভিতরট রেলিঙের দ্বারা দুইভাগে বিভক্ত ! যেন লোহ দিয়া কে মাকড়সার জাল বুনিয়াছে! দুইটা ঘরের স্বতন্ত্র দ্বার— একটি পিছনে, অপরটি সম্মুখে। গাড়ীর মধ্যে যেমন অন্ধকার, তেমনি ধূলা ও আবর্জনার রাশি ! ইহার তুলনায় আমার সে নির্জন ঘর ত, প্রাসাদ-কক্ষ ! এই কবরে জীবন্ত সমাধিলাভের পূৰ্ব্বে বাহিরের দিকে একবার প্রাণ ভরিয়া চাহিয়া দেখিলাম ! এই মুক্ত গগনের স্মৃতিটুকু লইয়া আঁধার সমুদ্রে ঝাপ দিতে হইবে । দ্বারের সম্মুখে দর্শকের দল সারি দিয়া দাড়াইয়াছিল! টপ-টিপ করিয়া বৃষ্টিও পড়িতেছিল—বোধ হয় সারাদিনে এ বৃষ্টির বিরাম হইবে না ! পথ ও প্রাঙ্গণ কাদায় ভরিয়া গিয়াছিল—চারিধারে একটা অপরিচ্ছন্ন ভাব ! গাড়ীতে উঠিয়া বসিলাম । সম্মুখভাগে সর্দার প্রহরী, ও সশস্ত্র প্রহরীর দল, এবং আচাৰ্য্য—পশ্চাতের কামরায় ; আমি একেল !