পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৪৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, পঞ্চম সংখ্যা । গাথিয়া মাটিতে ফেলিয় রাখিয়াছিল—তাহ উঠাইয়া লইয়া শক্তির গলায় দিয়া রাজকুমার বলিলেন “এই দেখ” । শ্ৰীমতী স্বর্ণকুমারী দেবী প্রণীত ফুলের মালার এই দৃপ্তই চিত্রকর অঙ্কিত করিয়াছেন। স্বৰ্গীয় কালীপ্রসন্ন ঘোষ বিদ্যাসাগর। 8 ?ዓ . ধৃতরাষ্ট্র ও সঞ্জয়—শ্ৰীযুক্ত নন্দলাল বসু অঙ্কিত চিত্র হইতে । অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রকে সঞ্জয় কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সম্বাদ দিতেছেন ইহাই চিত্রের বর্ণনীয় বিষয় । স্বৰ্গীয় কালীপ্রসন্ন ঘোষ বিদ্যাসাগর। গত ১৩ই শ্রাবণ শুক্রবার প্রাতে স্বনামধন্ত মনস্বী রায় কালীপ্রসন্ন ঘোষ বাহাদুর স্বৰ্গারোহণ করিয়াছেন । কালীপ্রসন্ন বঙ্কিমচন্দ্র, দীনবন্ধু প্রভৃতির সমসাময়িক লোক । বালককাল হইতেই মেধাশক্তিতে, চিন্তাশীলতায়, পাণ্ডিত্যে ও বাগি গুtয় তিনি অসাধারণ ছিলেন । ১২৫০ সালে কালীপ্রসন্ন যখন জন্মগ্রহণ করেন, সে সময়ে দেশে সংস্কৃত ও ফার্সা অধ্যয়নই প্রচলিত ছিল—ইংরাজির আধিপত্য তখনও বৃদ্ধদিগের মনে বদ্ধমুল হয় নাই । সুতরাং বালককালে কালীপ্রসন্ন ইংরাজি পাঠের সুযোগ পান নাই । অবশেষে কিছুকাল পরে যখন ইংরাজি শিক্ষা করিবার সুযোগ ঘটিল, তখন তিনি এরূপ অন্তরের সহিত অধ্যয়ন আরম্ভ করিলেন যে অল্পকালের মধ্যেই ইংরাজি সাহিত্য দর্শনে পণ্ডিত হইয়া উঠিলেন । সেকালের ইংরাজি শিক্ষিতগণের মধ্যে মাতৃভাষা বড়ই হেয় ছিল, কিছু লিখিতে বা বলিতে হইলে তাহার তৎক্ষণাৎ রাজভাষার আশ্রয় লইতেন । কালীপ্রসন্ন সেই স্রোতে ভাসিলেন । পাঠ্যাবস্থা হইতেই ইংরাজিতে এরূপ প্রবন্ধ ও বক্তৃতা দিতে আরম্ভ করেন যে তাহার অসামান্ত প্রতিভাদর্শনে স্বৰ্গীয় মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ, ডাক্তার লাল বিহারী দে ইত্যাদি মনস্বীগণ,—এমন কি, রেভারেও ডাউ প্রভৃতি ইংরাজগণ ও বিস্মিত হইতেন। তাহার ভাষার মাধুর্য্য ও গাম্ভীৰ্য্য এত অসামান্ত ছিল, ভাবের গভীরতা ও শব্দ যোজনাশক্তি এতই সুন্দর ছিল যে এক সময়ে তাহার ইংরাজি বক্তৃতা শুনিয়া ঢাকার কমিশনার টয়নবি সাহেব বলেন “আমি ইতালির বাদ্য বড় ভালবাসি এবং অনেক দিন তাহা শুনিয়াছি ; কিন্তু কালীপ্রসন্নের বক্তৃতায় যে একটা অপূর্ব ও অসাধারণ মাধুরী আছে, ইতালির বাদ্য সঙ্গীতেও তাহা নাই ।” বাঙ্গালীর ছেলের শিক্ষিত ইংরাজের নিকট হইতে এরূপ প্রশংসালাভ সহজ শক্তির পরিচায়ক নহে । কিন্তু দেশের পক্ষে, মাতৃভাষার পক্ষে তাহার এই অসাধারণ প্রতিভা এতদিন নষ্ট হইতেছিল। সৌভাগ্যবশতঃ এক ইংরেজ বন্ধুর প্ররোচনায় কালীপ্রসন্ন কায়মনোবাক্যে মাতৃভাষার সেবায় নিযুক্ত হইয়া বঙ্গভাষার উন্নতিকল্পে ঢাকা নগরে বান্ধব নামে এক মাসিক পত্র বাহির করিলেন। তখন বঙ্কিমচন্দ্র বঙ্গদর্শন লিখিতেছেন । কালীপ্রসক্সের বাঙ্গালা রচনা দেখিয়া বঙ্কিমচন্দ্র লিখিয়াছিলেন “ভাষা সুন্দর, চিন্তা অসামান্ত ।”