৩৪শ বর্ষ, যষ্ঠ সংখ্যা । সভ্যতার উজ্জল চাকচিক্য দ্বার। তাছার চক্ষুকে ঝলসাইয়া দেয়,--তখন তাহীর জ্ঞানে এইরূপ একটা গোলমেলে রকমের একাকারের প্রতিষ্ঠা হয়। এবং এই একাকারের মধ্যে সে আপনাকে একান্তই হারাইয় ফেলে। তখন সে স্বকেই পর ও পরকেই স্ব বলিয়া ধরিতে আরম্ভ করে। আধুনিক যুরোপের সঙ্গে প্রথম সংঘর্ষ উপস্থিত হইলে, আসিয়ার প্রাচীন জাতি সকলেরে এই দশাই উপস্থিত হইয়াছিল । প্রথমে তাহীদের জ্ঞানে একটা গেtলমেলে রকমের একাকারের স্বষ্টি হয় । কিছুদিন পৰ্য্যন্ত স্ব-পর ভেদ একরূপ বিলুপ্ত হইয়া যায় । আমরা সকলেই ইদংএর দ্বারা একান্ত অভিভূত হইয়া, অহংকে ভাল করিয়া ধরিতে পারি নাই ! আর অহংকে ভাল করিয়া ধরিতে পারি নাই বলিয়া, ইদংকেও ভাল করিয়া বুঝিতে পারি নাই । ক্রমে এই গোলমেলে একাকারের অবস্থা অতিক্রম করিয়া উঠিতেছি । এবং যুরোপ যতই তাহার দুদিনের সভ্যতা দ্বারা, আমাদের যুগযুগাস্তের সাধনাকে ঠেলিয়া ফেলিবার চেষ্টা করিতেছে, ততই তার এই সভ্যতার দাবিটা যে কি, এ দাবির ভিত্তি ও যুক্তি কত শক্ত, এ সকল বিচার করিতে আরম্ভ করিয়াছি। ১২ । সভ্যতা ও অসভ্যত । প্রথমে যখন যুরোপ আমাদিগকে অসভ্য বলিয়াছিল, তথন আমরা মাথা হেঁট করিয়া, তার এই রায়কে মানিয়া লইয়াছিলাম । আমরা খালি গায়ে থাকি, খালি পারে ইঁট, মাটিতে আঁচল পাতিয়া বসি, হাত দিয়া থাই, ঠাকুর দেবতা মানি, শ্রাদ্ধশাস্তি করি, Nე ভারত ও বিলাত । 8げ○ বীণাবেণু বাজাই,-আমাদের গায়ে কোট পেণ্টলুন নাই, পায়ে জুতাঞ্জামা নাই, ঘরে সোফা চৌকী নাই ; আমরা টেবিলে থাই না, কঁটি চামচ ধরি না ; পুতুলের পূজা করি, মরা মানুষের পিণ্ডদান করি, হারমোনিয়ম পিয়ানো বাজাই না;— এসকলই আমাদের বর্বরতার লক্ষণ বলিয়া ধরিয়া লইয়াছিলাম। সেই সময়ে মাইকেলকে মিণ্টন বলিয়া, বঙ্কিমকে স্কট বলিয়, রবীন্দ্রকে শেলী বলিয়া, কালিদাসকে শেক্ষপীয়র বলিয়া, আমাদের মন সত্ত্বেন লাভ করিত । আমরাও যে সভ্য, আমাদেরো যে একটা সনাতন, একটা নিজস্ব সভ্যতা ও সাধনা আছে, এ জ্ঞান তখনো জন্মে নাই । ক্রমে এখন সে জ্ঞান জন্মিয়াছে। প্রথম সময়ের গোলমেলে একাকারের পরিবর্তে, এখন স্ব-পরভেদট ক্রমশঃই জ্ঞানে স্ফুটতর হইয়া উঠিতেছে। তাই এখন আমরা বুঝিতেছি যে খালি গায়ে থাকা, খালি পায়ে চলা, আসনে বসা, হাতে খাওয়া,—এ সকল অসভ্যতার চিহ্ন নয় । প্রত্যেক দেশের রীতিনীতি, আচারব্যবহার, সেই সেই দেশের ভিত্তরের ও বাহিরের অবস্থা হইতে, স্বাভাবিক নিয়মে গড়িয়া উঠে । ইংরেজ বা জৰ্ম্মাণ, চিরদিনই যে কাটাচামচে দিয়া খাইত, বা চেয়ার-সোফায় বলিত, এমন নহে । আর হঠাৎ একদিন যে সকলে মিলিয়৷ সভা করিয়া, হাত তুলিয়া ঠিক করিয়াছিল যে আর আমরা হাতে খাইব না, বা মাটিতে বসিব না, এমনো নহে। এ সকল রীতিনীতি কালক্রমে, প্রয়োজনানুরোধে সমাজে অল্পে অল্পে প্রবৰ্ত্তিত হইয়াছে। লজ নিবারণের জন্ত মামুষ প্রথমে কাপড় পরিতে
পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৫০৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।