পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৫১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, ষষ্ঠ সংখ্যা । এমনি পদে পদে দেখতে পাচ্চি জগতের রাজা আমাকে খুসি করবার জন্য তার বহুলক্ষ যোজনান্তরেরও অনুচর পরিচরদের হুকুম দিয়ে রেখেছেন ; তাদের সকল কাজের মধ্যে এটাও তারা ভুলতে পারে না । এ জগতে আমার মূল্য সামান্ত নয়। কিন্তু সুখের আয়োজনের মধ্যেই যখন নিঃশেষে প্রবেশ করতে চাই--তখন আবার কে আমাদের হাত চেপে ধরে-বলে, যে, তোমাকে বদ্ধ হতে দেব না। এই সমস্ত সুখের সামগ্রীর মধ্যে ত্যাগী হয়ে মুক্ত হয়ে তোমাকে থাকৃতে হবে তবেই এই আয়োজন সার্থক হবে। শিশু যেমন গর্ভ থেকে মুক্ত হয়ে তবেই যথার্থভাবে সম্পূর্ণভাবে সচেতনভাবে তার মাকে পায় তেমনি এই সমস্ত সুখের বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যখন মঙ্গললোকে মুক্তিলোকে ভূমিষ্ঠ হবে তখনই সমস্তকে পরিপূর্ণরূপে পাবে। যখনি আসক্তির পথে যাবে তখনই সমগ্রকে হীরাবার পথেই যাবে –বস্তুকে যখনি চোখের উপরে টেনে আনবে তথনি তাকে আর দেখতে পাবে না, তখনি চোখ অন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের পিতা মুখের মধ্যে আমাদের বদ্ধ হতে দেন না, কেননা সমগ্রের সঙ্গে আমাকে যুক্ত হতে হবে—এবং সেই যোগের মধ্য দিয়েই তার সঙ্গে আমার সত্য যোগ। . এই, সমগ্রের সঙ্গে যাতে আমাদের যোগ সাধন করে তাকেই বলে মঙ্গল। এই মঙ্গল বোধই মানুষকে কিছুতেই মুখের মধ্যে স্থির থাকৃতে দিচ্চেনা—এই মঙ্গল বোধই পাপের বেদনায় মানুষকে এই কান্না র্কাদীচে— মা মা হিংসীঃ, বিশ্বানি দেব সবিত জুরিতানি छि श्रु । 8 సరి পরাক্সব, যদুভদ্রং তন্ন আমৃব। সমস্ত খাওয়া পরার কান্না ছাড়িয়ে এই কান্না উঠেছে— আমাকে দ্বন্দ্বের মধ্যে রেখে আর আঘাত কোরে! না, আমাকে পাপ থেকে মুক্ত কর ; আমাকে সম্পূর্ণ তোমার মধ্যে আনন্দে নত করে দাও। তাই মানুষ এই বলে নমস্কারের সাধন করচে, নমঃ সম্ভবtয় চ ময়েtভবtয় চ—সেই মুখকর যে তাকেও নমস্কার,আর সেই কল্যাণকর যে র্তাকেও নমস্কার-- একবার মাতারূপে তাকে নমস্কার, একবার পিতারূপে তাকে নমস্কার। মানবজীবনের দ্বন্দ্বের দোলার মধ্যে চড়ে যেদিকেই হেলি সেইদিকে র্তাকেই নমস্কার করতে শিখতে হবে – তাই বলি, নমঃ শঙ্করায় চ ময়স্করায় চ—সুখের আকর যিনি তাকে ও নমস্কার, মঙ্গলের অাকর যিনি তাকেও নমস্কার—মাতা যিনি সীমার মধ্যে বেঁধে ধারণ করচেন পালন করচেন তাকে ও নমস্কার, অtর পিতা যিনি বন্ধন ছেদন করে অসীমের মধ্যে আমাদের পদে পদে অগ্রসর করচেন তাকেও নমস্কার । অবশেযে দ্বিধা অবসান হয় যখন সব নমস্কার একে এসে মেলে —তখন নমঃ শিবায় চ শিবতরীয় চ–তখন সুখে মঙ্গলে আর ভেদ নেই বিরোধ নেই— তখন শিব, শিব, শিব, তখন শিব এবং শিবতর —তখন পিতা এবং মাতা একই—তখন একমাত্র পিতা ;–এবং দ্বিধাবিহীন নিস্তব্ধ প্রশান্ত মানবজীবনের একটিমাত্র চরম নুমস্কার, নমঃ শিবায় চ শিবতরায় চ। নিবাত নিষ্কম্প দ্বীপশিখার মত উৰ্দ্ধগামী একাগ্র এই নমস্কার—অমুত্তরঙ্গ মহাসমুদ্রের মত দশদিগন্তব্যাপী বিপুল এই নমস্কার— নমঃ শিবায় চ শিবতরায় চ | শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।