৩৪শ বর্ষ, প্রথম সংখ্যা । কিন্তু অনেকক্ষণ পৰ্য্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। তখন সে এ কথও পাথর লইয়া মৰ্ম্মস্থলে আঘাত করিল ;–ধীরে ধীরে বিন্দু বিন্দু রক্ত বুক বাহিয়া মন্দির সোপানে পড়িল। অমনি শব্দ উঠিল—“কি চাও ?” রমণী বলিল—“এক পুরুষ আছেন, তিনি আমার কাছে সব চেয়ে প্রিয়, তাকে আপনি বর দিন ।” —“কি বর চাও ?” —“তা তো জানিনা প্ৰভু ! যাতে তার সৰ্ব্বাঙ্গীণ মঙ্গল হয় সেই বর দিন ।” —“তথাস্তু !” বহুদিনের আকাঙ্ক্ষা আজ সফল হইল । রমণী তখনই উঠিয়া দাড়াইল । বর লাভ করিয়া আনন্দে তাহার শরীর পূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে। পুরুষটিকে সেই সংবাদ দিবার জন্স সে অধীর হইয়া উঠিল । ধীরে ধীরে না চলিয়া মনের উৎকণ্ঠায় দৌড়িতে লাগিল । স্থির বন দ্রুতপাদক্ষেপে কঁপিয়া উঠিল, স্তব্ধতা ভঙ্গ করিয়া শুষ্কপত্র হইতে কান্নার মত মৰ্ম্মর ধ্বনি উঠিল । অন্ধকারের মধ্যে সেই শব্দ শুনিয়া রমণীর প্রাণ চকিত ও ভীত হইয়া উঠিতে লাগিল ! শীঘ্রই সে বনের বাহির হইয়া আসিল । সে স্থান অন্ধকার নয়, সেখানে তখন বদস্তের বাতাস বহিতেছে, পুষ্পগন্ধে দিক ভরিয়া আছে ; দূরে সমুদ্রতীরের বালুক জ্যোৎস্না আলোকে আকাশের নক্ষত্রের মত জলিতেছে! সমুদ্রতরঙ্গ চন্দ্রালোকে নাচিতেছে! আকাশে, বাতাসে, জলে স্থলে আনন্দ রাগিণী বাজিয়া উঠিয়াছে। গমণী সমুদ্রের দিকে ছুটির বাইতে যাইতে অপর জগতের কথা । ૧૭ হঠাৎ থমকিয় দাড়াইল। অদূরে একখানি তরণী সমুদ্রের বুকে দিব্য ভালিয়া যাইতেছে, কোথাও আটক নাই, বাধা নাই ; সমুদ্রতরঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে নাচিয়া নাচিয়া চলিয়াছে ! রমণী ভাবিল—“এমন রাতে এমন সময় দেশ ছাড়িয়া কে যায় ? কে ঐ তরণীর দাড় ধরিয়া দাড়াইয়া ?” অস্পষ্ট আলোকে তাহাকে চেনা যাইতেছিল না, তাহার মুখ ভালো করিয়া দেখাও যাইতেছিল না, কিন্তু রমণী অল্পক্ষণের মধ্যেই বুঝিতে পারিল সে কে ! সে মুক্তি যে তাহার হৃদয়পটে আঁক—সে যে চিরপরিচিত ! তরী ক্রমেই দূর হইতে দূরে যাইতে লাগিল, ক্রমেই সব অস্পষ্ট হইয়া আসিল । এমন সময় সে কি দেখিল ? –এ কি ? এক পরমাসুন্দরী বালিকা —তরণীর হাল ধরিয়া বসিয়া আছে ;—তাহার সুন্দর কচিমুখে জ্যোৎস্নার শুভ্র আলো ! রমণীর প্রাণ উতলা হইয়া উঠিল। সে পাগলিনীর মতো ছুটয়া সমুদ্রে ঝাপ দিতে গেল—নেীক আটক করিবে ! কিন্তু সমুখে সমুদ্র তরঙ্গ যে দুর্গপ্রাচীরের মতে ঘিরিয়া দ।ড়াইয়াছে ! তাহ ভেদ করিয়া যাওয়া অসাধ্য। তবে সে কি করিবে ? নিরুপায় হইয়। কঁদিতে লাগিল । সমুদ্রের দিকে আকুলভাবে বাহুহুটি প্রসারিত করিয়া শুধু বলিতে লাগিল—এস ফিরে এল, বঁধু, ফিরে এস ! - রমণী জলে নামিয়া পড়িয়ছে, তরঙ্গপ্রাচীর ভেদ করিয়া সম্মুখে অগ্রসর হইবার জন্য যুঝিতেছে এমন সময় তাহার কানের পাশে কে যেন বলিল--"এ কি করছিস্ ?” বালিক উচ্ছসিত হইয়া কাদিয়া ফেলিল।
পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৯০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/8/84/%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%80_%E0%A6%AC%E0%A7%88%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%96-%E0%A6%86%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A8_%E0%A7%A7%E0%A7%A9%E0%A7%A7%E0%A7%AD.djvu/page90-1024px-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%80_%E0%A6%AC%E0%A7%88%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%96-%E0%A6%86%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A8_%E0%A7%A7%E0%A7%A9%E0%A7%A7%E0%A7%AD.djvu.jpg)