৩৮শ বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা . দাসীর এই ইঙ্গিতে গিরির মন ভারী হইয়া উঠিল, তিনি মনে করিলেন ছোট বেী তাহার অনুমতির অপেক্ষে না করিয়াই নিজের বোনঝিকে নিজের কাছে আনাইবার ব্যবস্থা করিতেছেন। গিরিকে চুপ করিয়া 'থাকিতে দেখিয়া ছাপাব মা বণিতে লাগিল—বোহিণী বগার্থ ই বলছিল—আপনি গুতে ঠাই পান ন, আবার শঙ্কবাকে ডাকেন। রোহিণী আমব সঙ্গে ঝগড়া কবে মরে, ওর ঐ যা এক দোষ ; নইলে যা বল ত বল বাপু, ওর বুদ্ধিগুদ্ধি আছে ; এক-একটা কথা বলে ভাল ! গিন্নি লোকটি বড় সরল ; কেবল, তিনি যে একজন মস্ত লোক, এই জমিদার সংসাবের গিন্নি, এই অহঙ্কার তাহাকে অতিমাত্র প্রভুত্বপ্রিয় ও তেষামোদলিপ্ত কবিয়া তুলিয়াছে। তিনি রাণী বলিয়া বাড়ীর পরিজনদের সহিত মিশিতে পারিতেন ন}, বাহিরের পাড়াপ্রতিবাসিনীদের মধ্যেও তাহাব সমকক্ষ সঙ্গিনী হইবার মতন কেহ ছিল না ; ইহাতে র্তাহাকে সৰ্ব্বদাই দাসীদের লইয়াই দিন কাটাইতে হইত; ছোট লোকের ংসর্গে থাকিয়া থাকিয় তাহার মনটি ভালোয় মন্দে জড়াইয়া জটিল হইয়া গিয়াছিল। কোনো একটা বড় বিষয়ে তিনি যে কেন উদার,এবং এক-একটা সামান্ত ছোট ব্যাপাবে কেন যে অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ তাহা বুঝা যাইত না! তাহার সংসারে সম্পৰ্কীয় ও নিঃসম্পৰ্কীয়া আশ্রিতার সংখ্যা ছিল না, কেহ আসিয়া আশ্রয় চাহিলেই সে পরিবারভুক্ত হইয়া রাজার গলে থাকিতে পাইত ; কিন্তু খুড়িমার মুখে আবেদন শুনিবার পূৰ্ব্বেই দাসীর মুখে খুড়িমার স্রোতের ফুল > ○○ নিরাশ্রয়া বোনঝির আগমন-সংবাদটা বিরূপ ভাবে শুনিয় তাহার মন বাকিয়া, বসিল । . অধিকন্তু খুড়িম যে এককালে তাহারই সমকক্ষ শবিক ছিলেন, এ কথা রাণী কিছুতেই ভুলিতে পারিতেন না, তিনি তাই পদে পদে খুড়িমার অহঙ্কারের পৰিচয় পাইতেছেন মনে কবিয়া তাহার কোনো আচবণই সহজভাবে লইতে পারিতেন না ; অপর আশ্রিতাদিগেব যে ক্রটি তিনি লক্ষ্যও করিতেন না, খুড়িমার পক্ষে সেই ক্রটি কল্পনা করিয়াই তিনি মনকে বিরূপ করিয়া তুলিতেন। সজলনেত্রী খুড়িমা যখন মালতীর চিঠি হাতে করিয়া সেই পুকুরঘাটে উপস্থিত হইলেন তখন দেখিলেন রাণীগিন্নি মুখ ভার করিয়া গম্ভীব হইয়া বসিয়া আছেন, দাসীরা একমনে তেল মাথাইতেছে। - খুড়িমাব সঙ্গ সঙ্গে গৰ্ব্বিত বোহিণী ও রঙ্গদশিক পুবাঙ্গনগণ ঘাট পর্যন্ত আসিয়াছিল ; ছোট ছোট ছেলে-মেয়েগুলিও অবুঝ ঔৎসুক্যে খেলা ভুগিয়া এই জনতার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়াইয়া ফিরিতেছিল ; তাহাবা গিন্নির যুখের ভাব দেখিয়া থমকিয়া দাড়াইল ; এবং ছোট বৌ এর বোনঝিব ব্যাপাব লইয়া বাড়ীতে এমন একটা সোরগোল পড়িয়া গিয়াছে দেখিয় গিরির মুখ অধিকতর অপ্রসন্তু হইয়া,উঠিল। . ব্যাপার বুঝিতে খুড়িমার বিলম্ব হইল না। ভিক্ষুকের দৈন্ত ও লজ্জ তাহাকে কুশাঘাত করিতে লাগিল। তাহার মুখ দিয়া একটিও কথা ফুটিল না,–কিন্তু চোখ দিয়া অশ্রু ঝরিতে লাগিল বিস্তর। আজ র্তাহার শোকের চেয়ে তাহার ভিক্ষার কথাটাই যে লোকের কাছে বড় হইয়া দেখা দিয়াছে এই
পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩২১.djvu/১৪২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।