পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩২১.djvu/৩৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৮শ বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা পরিপক হইলে তাহার মন হইতে বিধবার বিবাহে সংস্কারজনিত আপত্তি দূর হইতে পরিবে । কিন্তু বছর না ফিরিতে মালতীর পিতার মৃত্যু হইল ; এবং তাহার বিবাহের কথাও চাপ পড়িয়া গেল । so এখন সংসারে শুধু সে ও তাহার মা । ছুটি বিধবার সামান্ত গৃহকৰ্ম্মের পর উদ্ধৃত্ত সময় যখন তাহদের শোকাৰ্ত্ত মনকে অত্যন্ত নিপীড়িত করিত, তখন মালতী পুস্তকের মধ্যে আপনার সমস্ত ভয় ভাবনা ডুবাইয়া দিতে চেষ্টা করিত। এইরূপে লেখাপড় করা তাহার নেশা হইয়া উঠিল । বছর দুই পরে যখন মাতার ও মৃত্যু হইল, তখন সে বুঝিল যে শুধু বই লইয়া থাকা যায় না, মামুষের জীবনে মানুষের সঙ্গ ও স্নেহ মমতারও আবিস্তক আছে। তাহার পরে গ্রামের নিষ্কৰ্ম্ম পুরুষের যখন অনাথ বিধবার দুঃখে অতিমাত্রায় কাতর হইয়া তাহার তত্ত্বাবধান করিতে উৎসাহিত হইয় উঠিল তখন মালতী অনেক ভাবিয়া চিন্তিয়া বুড়ী দাসী হরির মায়ের পরামর্শে তাহার মালিমার কাছে আশ্রয় লওয়াই শ্রেয় বলিয়৷ স্থির করিল। মালতী তাছার মাসিকে কখনে দেখে নাই। এই অচেনা আদেখা মাসির কাছে আশ্রয় লইতেও মালতীর মনে নানা প্রকার ভয় ভাবনা দেখা দিতেছিল। কিন্তু হরির মা তাহাকে সত্ত্বনা ও উৎসাহ দিতেছিল—“মায়ের বোন মাসি, তার কাছে যেতে আর ভয় কি ?” মালতী সাতদিন হুইল মাসিমাকে চিঠি লিখিয়াছে। কিন্তু কৈ আজও ত তাহার স্রোতের ফুল wox জবাব আসিল না । মালতী উদ্বিগ্ন হইয়৷ যেন দিশ খুজিয়া পাইতেছিলনা। • • বিকাল বেল। মালতী মেঝেতে আঁচল পাতিয়া শুইয়া আছে ; হরির মা তাহার চুলের রাশির মধ্যে অঙ্গুলি সঞ্চালন করিতে করিতে নীরবে তাহাকে সাত্বনা দিতেছিল। ঘরের দেয়ালে কুলুঙ্গিতে একটা টাইমপদ ঘড়ী ঘরের নিস্তব্ধতাকে টিটকারী দিতেছে। মালতী শুইয়া শুইয়া ভাবিতেছিল তাহার মাসিমারই কথা । মায়ের আকৃতি-প্রকৃতির অনুরূপ করিয়া মাসিমাকে সে গড়িতেছিল। দুঃখিনী মালতী প্রাণপণে মাসিমার লেবা যত্ন করিয়া নিঃসন্তান তাহার সমস্ত বাৎসল্য পাইয়। মায়ের শোক ভুলিতে পারিবে— এ আশা তাহার হইতেছিল । কিন্তু সেই সঙ্গে তাহার মনে হইতেছিল—মাসিম জমিদারের ঘরণী, তবু তিনি কখনো নিজের বোন বোনঝির খোজ খবর ত করেন নাই। সে শুনিয়াছিল বটে যে তাহার মাসিম বিধবা হইয়া সৰ্ব্বস্ব হারাইয়া এখন র্তাহার ভাস্করের আশ্রয়ে আছেন, কিন্তু পরাধীন বলিয়া কি এতটাই পরাধীন যে আত্মীয় স্বজনের খোজ খবর পর্য্যন্ত লইতে পারেন না! আর যদি তিনি তেমনি পরাধীনই হন, তবে তাহার কাছে গিয়া তাহাঁকে জানি কেমন ভাবে থাকিতে হইবে । আর যদি তেমন পরাধীন না হন তবে সে মাসির মেহের ভরসা না রাখাই ভালো ! মালতীর মন যখন এমনি চিন্তামগ্ন তখন সদর রাস্তায় কে একজন গুরুগম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করিল-হঁ্য হে, অক্ষয়বাবুর বাড়ী কোনটা ? এই প্রশ্ন শুনিবামাত্র মালতী তাড়াতাড়ি