৩৮শ বর্ষ, পঞ্চম সংখ্যা 醫》 পারবে—ডাক্তার বলেছেন, হাওয়া বদলালে আশ্চৰ্য্য ফল পাওয়া যাবে। জ্যোতিঃহারার টাকা ক’টা পেলেই তোমায় আমি খাড়া করে তুলব, ইলা। এ ক’টা দিন কোন মতে চোখ বুজে কাটিয়ে দাও।” নুতন স্বাস্থ্যলাভে ইলীর শীর্ণ দেহখানি বর্ষ। কালের ভরা নদীর হার কেমন কুলে কুলে পূর্ণতায় ভরিয়া উঠিবে, নব বসন্থাগমে শীতশীর্ণ লতিকার দেহ আবার কেমন করিয়া নবমুঞ্জরিত পত্র-পুষ্পে শোভা সম্পদে উদ্ভালিত হইবে, কল্পনা-নেত্রে কবি রমানাথ তাহারই একটা মোহিনী ছবি আঁকিয়া তুলিতেছিল। তাহার ভাব-প্লবণ তরুণ হৃদয় সহজে নিরাশ হইতে “ চাহে না . —অমঙ্গলকে অন্ধকারে সরাইয়া মঙ্গলের উজ্জল মূৰ্ত্তিকেই সে পূর্ণ বিশ্বাসের বলে অঁাকড়িয়া ধরিতে চাহিতেছিল। ইলাকে ভাল হইতে হইলে—নহিলে যে তাহার পক্ষে জীবন-ধারণ একান্তই অসম্ভব হইয় পড়ে ! 8 একটান জীবন-স্রোতে নূতনত্বের সম্ভাবনায় কিছুদিন হইতে ইলার শরীর একটু ভাল মনে হইতেছিল—কিন্তু সে ভাব স্থায়ী হইল না। জর প্রত্যহই হইতেছিল। ক্ষীণ দেহ ক্রমেই ক্ষীণতয় হইয়া বিছানায় মিলাইয়৷ আসিতেছে! রমানাথ তাহ লক্ষ্য করিতেছিল—তবু সে আশা ছাড়িতে পারে নাই। ডাক্তার বলিয়াছেন, “বায়ু পরিবর্তনই ঔষধ।” মেহন্ধি স্বামী সে কথার অর্থ বোধ করিতে পারিল না। রোগ যে এখন চিকিৎলার অতীত হইয়াছে, এ কথা কেমন করিয়া সে 8 জোতিঃহার 岱@@ বিশ্বাস করিবে ! জীবনে অনেক দুঃখ, অনেক ঝঞ্জা মাথার উপর. দিয়া ৰহিয়া গিয়াছে, অবশেষে শেষ মুখটুকু, তাহার * জীবনের একমাত্র আশা, একমাত্র অবলম্বন, ইলা ! সেই ইলাও যদি ঝটিকাচু্যত নীড়টুকুর স্তায় একদিন ঝোড়ে বাতাসে খসিয়া পড়ে, তবে তাহার পক্ষে বাচিয় থাকা কেমন করিয়া সম্ভব হইবে! তাহারই মুখ চাহিয়া যে সে সকাল হইতে সন্ধ্যা পর্য্যস্ত কাজের চেষ্টায় ঘুরিয়া বেড়ায়, তৈলাভাবে গ্যাস পোষ্টের নীচে বসিয়া সারা রাত্রি জাগিয়া নাটক লেখে ; আর তাহারই উৎসাহ-বাক্যে, তাহারই মিষ্ট হাসিতে সকল দুঃখ ভুলিয়৷ যায়, বাচিয়া মানুষ হইবার তাহার সাধ জন্মায় ! এই নাটক-প্রকাশেরই জন্ত প্রত্যেক থিয়েটারে ঘুরিয়া ঘুরিয়া কত লাঞ্ছনা, কত অপমান তাহাকে সহিতে হইয়াছে ! শুধু ইলার মুখ চাহিয়াই সে-সব সে সহ করিয়াছে। অবশেষে ওরিয়েণ্টাল থিয়েটারেব ম্যানেজারের চোখে তাহার জ্যোতিঃহারার আদর হইয়াছে। টাকা অগ্রিম দিযার কথা ছিল না । সে কথা তুলিলে ম্যানেজার পাছে বই ফেরত দেন, সেও তাই সাহস কুরিয়া সে কথা কহিতে পারে নাই। এমন দিন ছিল, যখন গুস্তকের প্রকাশ ও প্রশংসা-লাভই তাহার কাম্য ছিল, কিন্তু এখন আর সে দিন নাই ! পুস্তকের মুখ্যাতি বা নিন্দায় কিছুই যায় আসে না । প্রকাশেও কিছুমাত্র উদ্বেগ নাই ! এখন চাই শুধু পয়সা,—যে পয়সার অভাবে তাহার ইলাবিনা চিকিৎসায় চলিয়া যাইতেছে, আগে সেই পয়স চাই ! তাই - রমানাথ কোন সৰ্বে প্রতিবাদ করিল না ।
পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩২১.djvu/৪৫৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।