পাতা:ভারতের খনিজ - রাজশেখর বসু.pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভারতের খনিজ


 অনেক শিলা অত্যন্ত প্রাচীন— বহু কোটি বৎসর পূর্বে উৎপন্ন। পৃথিবী যখন সূর্য থেকে ছিটকে এসে স্বতন্ত্র হয় তখন তার দেহ তরল বা বায়ব ছিল, তার পর ক্রমশ তাপ ক'মে যাওয়ায় উপরের অংশ কঠিন হয়। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন, ভূপৃষ্ঠের উপর থেকে নীচে প্রায় ৫০ মাইল পর্যন্ত বিবিধ নূতন ও পুরাতন শিলায় গঠিত। তার নীচে যা আছে তা অতি তপ্ত, কিন্তু শক্ত কি নরম তা স্থির হয় নি। এই আভ্যন্তরিক পদার্থ খুব ভারী, সম্ভবত লোহা নিকেল প্রভৃতি ধাতুতে গঠিত। ভূমির যত নীচে নামা যায় ততই তাপ বাড়ে। আগ্নেয়গিরি ও উষ্ণপ্রস্রবণ এই অগুস্তাপের লক্ষণ। ভূপৃষ্ঠের অনেক শিলা ক্রমশ বাতাস বৃষ্টি জলপ্রবাহ তুষার প্রভৃতির প্রভাবে বিশ্লিষ্ট ও পরিবর্তিত হয়ে গেছে, তার পর আবার কোনও প্রাকৃতিক বিপ্লবে উলটপালটের ফলে নীচে নেমে গিয়ে প্রচণ্ড উত্তাপ ও চাপের প্রভাবে অন্য আকার পেয়েছে। শুধু একরকম শিলা থেকে অন্যরকম শিলা উৎপন্ন হয়েছে এমন নয়, বিবিধ উদভিদ প্রাণিকঙ্কাল প্রভৃতি জৈব বস্তুও শিলায় পরিণত হয়েছে, যেমন পাথুরে কয়লা, খড়ি। এইসব পরিবর্তন বহু কোটি বৎসরে ক্রমে ক্রমে হয়েছে। আবার অনেক শিলা অত প্রাচীন নয়, অনেকের বয়স কয়েক সহস্র বা কয়েক শত বা কয়েক বৎসর মাত্র, যেমন নদীর পলিমাটির স্তর।

 উৎপত্তি অনুসারে শিলা মোটামুটি তিন শ্রেণীতে ভাগ কর হয়।— (১) আগ্নেয় শিলা (igneous rock), যা উত্তপ্ত তরল অবস্থা থেকে ঠাণ্ডা হয়ে জমে কঠিন হয়েছে যেমন গ্র্যানিট, ব্যাসল্ট। (২) পাললিক শিলা (sedimentary rock), যা চূর্ণ বস্তু মিশ্রিত বা ঘোলা জল থেকে থিতিয়ে স্তরাকারে জমা হয় এবং অনেক স্থলে অন্য বস্তুর সঙ্গে মিশ্রণের ফলে শক্ত হয়ে যায়, যেমন বালির স্তর থেকে উৎপন্ন বেলেপাথর (standstone), রাসায়নিক ক্রিয়ায় প্রাণিবিশেষের কঙ্কালরাশি থেকে উৎপন্ন চুনেপাথর (limestone), কাঙ্গার স্তর থেকে উৎপন্ন শেল (shale)। (৩) রূপান্তরিত শিলা (metamorphic rock), যা মূলত পাললিক বা আগ্নেয়, কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তাপ ও চাপের প্রভাবে