পাতা:ভারতের খনিজ - রাজশেখর বসু.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভারতের খনিজ

অভ্র (mica), আকরিক মুন (rock salt)। ইংরেজী mineral শব্দের নকলে খনিজ শব্দের দুই অর্থ করবার দরকার নেই। শেষোক্ত অর্থে mineralএর প্রতিশব্দ ‘মণিক’। মণিকের আলোচনা এই পুস্তকের উদ্দেশ্য নয়।

 উপরে যে সংজ্ঞার্থ দেওয়া হয়েছে তাতে বোঝা যাবে যে মণিক মাত্রই খনিজ, কিন্তু খনিজ মাত্রই মণিক নয়। কলকাতার রাস্তা যে পাথর দিয়ে 'বাঁধানো হয় তার নাম ব্যাসল্ট বা ট্র্যাপ (basalt, trap)। এই পাখর খনিজ, কিন্তু বিভিন্ন রাসায়নিক বস্তুর মিশ্রণে উৎপন্ন সেজন্য মণিক নয়।

 খনিজবস্তু অসংখ্য প্রকার। ভারতেও অনেক রকম পাওয়া যায়, তার মধ্যে যেগুলি কাজে লাগে কেবল সেইগুলিই আমাদের আলোচ্য। এই পুস্তকে খনিজের প্রাকৃতিক বিবরণের সঙ্গে তার প্রয়োগ এবং তজ্জাত অন্যান্য পদার্থ সম্বন্ধেও কিঞ্চিৎ বলা হয়েছে। সেকালে এদেশে যত রকম খনিজের প্রয়োগ জানা ছিল তার তুলনায় এখন বিজ্ঞানের প্রসারের ফলে অনেক বেশী রকম খনিজ কাজে লাগানো হচ্ছে। অনেক খনিজের দেশী নাম পর্যন্ত নেই। কতকগুলির স্থানীয় নাম থাকলেও তা বহুপ্রচলিত নয়। সেজন্য অধিকাংশ খনিজের ইংরেজী বা ইওরোপীয় বৈজ্ঞানিক নামই বাংলায় চালাতে হবে ৷

 ইংরেজী ১৯৩৮ সালে ভারতে যত খনিজ তোলা হয়েছিল তার মোট মূল্য ৩৪ কোটি টাকার উপর। অনেক খনিজ কাঁচা মাল হিসাবেই বিদেশে চালান যায়। ভারতবাসীর স্বত্ববোধ তীক্ষ্ণ নয়, স্বত্বরক্ষার সামর্থ্যও কম, সেজন্য অনেক আকরের ইজারা বিদেশীর হাতে গেছে। এদেশের লোকে ধান পাট সরষে গম আৰু কাপাস প্রভৃতি বোঝে, পাথুরে কয়লাও কিছু বোঝে, কিন্তু বৰাইট ম্যাংগানিজ প্রভৃতি সম্বন্ধে সাধারণের কোনও জ্ঞান নেই, ধনী ভূবিস্তায় শিক্ষিত তাঁরাও ভূস্বামীরও বিশেষ কৌতূহল নেই। যারা অবস্থাগতিকে নিষ্ক্রিয় স্রষ্টা মাত্র হয়ে আছেন। যদি বিষয়বুদ্ধি, অর্থবল, এবং খনিকর্মে ও খনিজতত্ত্বে অভিজ্ঞতার সমবায় ঘটে তবেই খনিজের সৎপ্রয়োগ হ'তে পারে। এই সমবায় এদেশে এখনও চূর্ঘট, তথাপি আশার কথা এই