পাতা:ভারতের খনিজ - রাজশেখর বসু.pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিলার শ্রেণীভেদ


যে, দেশের শিক্ষিত ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের দৃষ্টি ক্রমশ এদিকে পড়ছে এবং তার ফলে কয়েক স্থানে দেশী খনিজ থেকে শিল্পসামগ্রী উৎপাদনের আয়োজন হয়েছে।

 কৃষি মানুষের আয়ত্ত, সেজন্য শ্যাদি প্রচুর খরচ করলেও পুনরুৎপাদনের উপায় আছে, কিন্তু খনিজদ্রব্যের কণামাত্র দৃষ্টির ক্ষমতা কারও নেই। সভ্যতাভিমানী জাতিরা অপব্যয়ী ধনিসস্তানের মতন জগতের খনিজসম্পদ এত দিন বেপরোয়া খরচ করেছে, ফুরিয়ে গেলে কি হবে তা ভাবে নি। বিগত এবং বর্তমানে বুদ্ধে লোহা তামা নিকেল রাং কয়লা পেট্রোলিয়ম প্রভৃতির যে অপচয় হয়েছে এবং হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। অবশ্য কতকগুলি খনিজের ভাণ্ডার অতি বিপুল, হয়তো মানবজাতির আয়ুষ্কালের মধ্যে নিঃশেষ হবে না, কিন্তু অনেক খনিজ অল্পই পাওয়া যায়। এর মধ্যেই আমেরিকায় তৈলাভাবের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, অনেক দেশের বড় বড় কয়লার খনি রিক্ত হয়ে পড়েছে পাশ্চাত্য দেশের দূরদর্শী বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন— সময় থাকতে সতর্ক হও, অপচয় বন্ধ কর, যথাসম্ভব দুর্লভ বস্তুর পরিবর্তে সুলভ বস্তু দিয়ে কাজ চালাও। এদেশে যেসব আকর আছে তার উপর দেশবাসীর কর্তৃত্ব অতি অল্প, তথাপি এখনই জনসাধারণের অবহিত হওয়া কর্তব্য। এদেশের প্রতি যাদের মমতাবোধ নেই তারা আকরের অধিকার পেয়ে ভবিষ্যৎ ভেৰে সংযমী হবে না, তাদের স্বার্থ তাড়াতাড়ি যত পারে আদায় ক'রে নেওয়া। সুতরাং ভারতবাসীর নিজ সম্পত্তির অবস্থান আর পরিমাণ সত্বর বুঝে নিতে হবে, এবং যত দিন স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা না হয় তত দিন লুণ্ঠনে আর অপর্যয়ে যথাসাধ্য বাধা দিতে হবে।

২। শিলার শ্রেণীভেদ

 ইংরেজী ভুবিদ্যা-বিষয়ক গ্রন্থে rock শব্দটি প্রসারিত অর্থে চলে। বাংলায় তার প্রতিশব্দ ধরা হয়েছে— 'শিলা'। শিলার অর্থ শুধু পাথর নয়, প্রাকৃতিক ক্রিয়ায় উৎপন্ন পুঞ্জীভূত খনিজপদার্থ মাত্রই শিলা, যেমন পাথর, কয়লার স্তর, বালি পলিমাটি বা কাদার স্তর।