বাঙ্গলার যে বিশেষ ধাত, তাহার নিজস্ব যে রসবোধ, তাহারই ছাঁচে সকল বাহিরের প্রভাবকে ফেলিয়া ঢালাই করিয়া সে গড়িয়া তুলিতেছিল আপনারই অস্তরাত্মার বাঙ্ময় মূর্ত্তি। তবুও স্বীকার করিতে হইবে যে, রূপ হিসাবে যাহাই হউক কিন্তু বস্তু হিসাবে সেখানে যাহা পাই, তাহা দেশের অন্তরাত্মারই সম্পদ বলিয়া মনে হয় না, তাই সেখানে অনুভব হয় কেমন একটা শূন্যতা। সাহিত্যের দেহে,— তাহার ভঙ্গীতে, তাহার ভাষায় দেখি লাগিয়া রহিয়াছে বাঙ্গলার কবিতার জন্ম-সিদ্ধ চিরপরিচিত একটা লালিত্য, একটা সুঠাম কমনীয় গড়ন; কিন্তু আসল যে জিনিষ, যে পদার্থ এমন সুন্দর পরিচ্ছদে ব্যক্ত করিয়া ধরা হইয়াছে তাহার মূল্য কষিয়া দেখিতে গেলে বিশেষ কিছু পাই না। এ রকম হইতে বাধ্য। স্রষ্টা যত বড়ই হউন না কেন, তাঁহার সৃষ্টিতে স্বাধীন চিন্তার, নিজস্ব অনুভূতির আবেগের অপেক্ষা বেশীর ভাগই যখন থাকে অপরের ভাব ও ভঙ্গী নিজের করিয়া লইবার আয়াস, তখন সে সৃষ্টি সমর্থ সারবান হইতে পারে না, স্রষ্টার বাস্তব সৃষ্টি স্রষ্টার ভিতরের সামর্থ্যের তুলনায় অকিঞ্চিৎকর বলিয়া বোধ হয়।
পাতা:ভারতের নবজন্ম - অরবিন্দ ঘোষ.pdf/৮০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভারতের নবজন্ম
৭৮