পাতা:ভারত-প্রতিভা (প্রথম খণ্ড) - সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়.pdf/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

388 ভারত-প্ৰতিভা পাশ্চাত্যদেশে জাতিবিচার ভারতবর্ষের তুলনায় অনেক বেশী। আমেরিকার হোটেলে নিগ্রো প্ৰভৃতি কৃষ্ণকায় ব্যক্তির স্থান নাই। অনেকে স্বামীজীকে নিগ্রো মনে করিয়া তাহদের হোটেলে স্থান দিত না । তিনি ভারতবাসী বলিয়া যদি পরিচয় দিতেন, তবে তঁহার পক্ষে সর্ব স্থানেই অবারিত দ্বার হইত ; কিন্তু অপরকে ক্ষুদ্র করিয়া নিজে বড় হইবেন, এরূপ ইচ্ছা তিনি কোনও মতেই পোষণ করিতেন না। একবার দক্ষিণআমেরিকায় নিমন্ত্রিত হইয়া তিনি বক্তৃতা করিতে গিয়াছিলেন। তন্ত্রত্য কোনও হোটেলে তিনি স্থান পাইলেন না। নিমন্ত্রণকারীরা অবশেষে বহু কষ্টে তঁহার থাকিবার বন্দোবস্ত করিয়া দেয় ; কিন্তু তিনি, “আমি নিগ্রো নাই” এ কথা মুখ ফুটিয়া তখনও বলেন নাই। একদা একজন ধনকুবের তঁহাকে নিমন্ত্ৰণ করিয়াছিলেন। বাড়ীর দ্বারবান নিগ্রো বিবেচনা করিয়া তঁহাকে প্ৰবেশ করিতে দেয় নাই। কিছুকাল পরে সেই ভদ্রলোক সমস্ত ঘটনা জানিতে পারিয়া ভঁৰ্তাহার নিকট ক্ষমা-প্রার্থনা করিয়া বলেন, “আপনি আত্মপরিচয় কেন দিলেন না?” উত্তরে স্বামীজী বলিয়াছিলেন, “অন্যকে ছোট করিয়া আমি আত্মপ্ৰতিষ্ঠা করিব ? এরূপ নীচ কাৰ্য্যের জন্য আমার छन्म श्ब्र भाइँ ।” বক্তৃতা-কোম্পানীর সহিত কাজ করিবার সময় স্বামীজীকে সপ্তাহে বারো চৌদ্দ অথবা তদধিক বক্তৃতা প্ৰদান করিতে হইত। অত্যধিক পরিশ্রমে সময় সময় তাহার শরীর ও মন অত্যন্ত নিস্তেজ হইয়া পড়িত { অনেক সময় বক্তব্য বিষয় কিছুই তিনি খুজিয়া পাইতেন না। মনে হইত, তাহার পুজি যাহা ছিল, সব যেন নিঃশেষে উজাড় করিয়া দিয়াছেন। তখন তিনি পরদিবস কি বক্তৃতা করিবেন, তাহ স্থির করিতে না পারিয়া উৎকণ্ঠিত হইয়া উঠিতেন। এই সময়ে তাহার অপূর্ব অনুভূতির উদয় হইত।