পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ছিলেন অবিবাহিত মিশনারি। মিশনারিসুলভ শ্মশ্র‌ুবহুল এই ভদ্রলোক ছোটো ছেলেমেয়েদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং প্রায়ই তাদের সঙ্গে খেলায় মেতে যেতেন। এঁর নাম দিয়েছিলাম আমরা ‘ওল্ড ইয়াং’ আর আমাদের প্রধান শিক্ষককে বলতাম ‘ইয়াং ইয়াং’। মিস্টার ইয়ং প্রায়ই সর্দিতে ভুগতেন, তাই গরমের দিনেও তিনি বৃষ্টি পড়লেই দরজা জানলা বন্ধ করে বসে থাকতেন, পাছে ঠাণ্ডা লাগে। সর্দির কুফল সম্বন্ধে প্রায়ই তিনি নানাভাবে আমাদের সাবধান করতেন, বলতেন, সর্দি থেকে কলেরা পর্যন্ত হতে পারে। কখনো অসুস্থ বোধ করলে তিনি এমন কুইনিন খেতেন যে কিছুদিন প্রায় কালা হয়ে থাকতেন। এদেশে দীর্ঘ কুড়ি বছর বাস করবার পরও তিনি স্থানীয় ভাষায় একটি কথাও শুদ্ধ করে বলতে পারতেন কি না সন্দেহ। স্কুলের বাইরে তিনি বেড়াবার জন্য কখনো বেরোতেন না। যদি চাপরাশি তার টেবিলে কিছু রাখতে ভুলে যেত মিস্টার ইয়াং ঘণ্টা বাজিয়ে তাকে ডাকতেন, তারপর যে জিনিসটা দরকার ইশারায় বুঝিয়ে দিয়ে, তার দিকে ক্র‌ুদ্ধদৃষ্টি নিক্ষেপ করে, দেশীয় ভাষায় তাকে বকুনি দিতে না পারায় বিড়বিড় করে ইংরিজিতেই বলতেন, “এ কাজটা আগে কেন করা হয়নি?” কেউ তাঁর কাছে চিঠি নিয়ে এলে তাকে যদি অপেক্ষা করতে বলার দরকার হত তবে মিস্টার ইয়াং-ছুটে গিয়ে, স্ত্রীর কাছ থেকে অপেক্ষা করতে বলাযর দেশীয় ভাষাটা জেনে নিয়ে সেটাকে আওড়াতে আওড়াতে এসে কোনো রকমে বলে ফেলে ভারমুক্ত হতেন। কিন্তু এসব সত্ত্বেও আমাদের প্রধান শিক্ষক মশাইয়ের চালচলন ছিল অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন এবং তাঁকে আমরা সকলে খুবই শ্রদ্ধা করতাম। অবশ্য এই শ্রদ্ধার সঙ্গে বেশ খানিকটা ভয়ও থাকতো। আমাদের প্রধান শিক্ষয়িত্রীও অত্যন্ত স্নেহশীলা ছিলেন, কাজেই আমরা সকলেই তাঁকে

২৮