পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সেনের ছবিতেই দেখেছি। এতে অবশ্য আশ্চর্য হবার কিছু ছিল না, কারণ তিনি কেশবচন্দ্রের একজন একান্ত অনুরক্ত শিষ্য ছিলেন। শ‍ুধু একজনের অভাবে স্কুলের আবহাওয়াটা যেন একেবারে নীরস, একঘেয়ে হয়ে গেল। কোনো আনন্দই রইল না। এরই মধ্যে ক্লাস, পড়াশোনা, পরীক্ষা সবই আগের মতো চলল। অনেক সময়ে দেখা যায় একজন আর একজনের কাছ থেকে দূরে সরে যাবার পর তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়ে ওঠে। আমার বেলাতেও তাই হয়েছিল। প্রধান শিক্ষকমশাই চলে যাবার পর তাঁর সঙ্গে পত্রালাপ শ‍ুর‍ু করে দিলাম। বেশ কয়েক বছর এইভাবে তাঁর সঙ্গে আমার চিঠি লেখালেখি চলেছিল। তিনিই আমাকে শেখান কী করে প্রকৃতিকে ভালবাসতে হয়, প্রকৃতির প্রভাবকে জীবনে গ্রহণ করতে হয়—শ‍ুধু সৌন্দর্যবোধের দিক থেকে নয় নৈতিকবোধের দিক থেকেও বটে। তাঁর উপদেশ অনুযায়ী আমি দস্ত‌ুরমতো প্রকৃতিপজা শ‍ুর‍ু করে দিয়েছিলাম। নদীর ধারে কিংবা পাহাড়ের গায়ে অথবা অস্তগামী সূর্যের ছটায় রঙিন নির্জন কোনো মাঠে ভালো একটা জায়গা বেছে নিয়ে এসে ধ্যান অভ্যাস করতাম। তিনি লিখতেন, “প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বিলিয়ে দেবে, দেখবে প্রকৃতি তার অসংখ্য বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়ে তোমাকে প্রেরণা যোগাবে।” এইভাবে প্রকৃতির ধ্যান করে তিনি নিজেও নাকি মনে শান্তি ও একাগ্রতা লাভ করেছিলেন।

প্রকৃতির ধ্যান করে নৈতিক উন্নতি আমার কতখানি হয়েছিল জানি না। কিন্তু একটা লাভ হয়েছিল—প্রকৃতির বিচিত্র ও প্রচ্ছন্ন সৌন্দর্য আমার চোখে ধরা দিয়েছিল, তাছাড়া সহজেই মনে একাগ্রতা আনতে পেরেছিলাম। বাগানে গাছপালা ও ফুল দেখতে দেখতে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেতাম। কখনো কখনো বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কিংবা একাই

৪০