পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নদীর ধারে বা মাঠে ঘুরে বেড়াতাম—খেয়ালী প্রকৃতির বিচিত্র প্রকাশে মন ভরে উঠত। তখন বুঝতে পারতাম কবি কেন বলেছেন:

ছোট্ট মেঠো ফুলটি নদীর তটে
তার কাছে তা হলদে ফুলই বটে,
তবু যেন একটু কিছু আরো।

ওয়ার্ডস‍্ওয়ার্থের কাব্য যেন নতুন করে উপভোগ করতে শিখলাম। আর মহাভারতে এবং কালিদাসের কাব্যে প্রকৃতিবর্ণনা না পড়ে যে কী আনন্দ পেতাম তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না—ইতিমধ্যে আমাদের পণ্ডিতমশাইয়ের দয়ায় সংস্কৃতটা মোটামটি আয়ত্ত করে নিয়েছিলাম বলে মূল সংস্কৃতর রসই উপভোগ করতে পারতাম। এই সময় থেকে আমার মনের মধ্যে এক বিষম ওলটপালট শ‍ুরু হল। প্রায় বছর দুয়েক সে যে কী অসহ্য মানসিক অশান্তিতে কেটেছিল তা বলবার নয়। বাইরে থেকে অবশ্য কিছু বোঝবার জো ছিল না। এক্ষেত্রে অন্তরঙ্গ বন্ধুবান্ধবের পক্ষেও কিছু করবার ছিল না। এ ধরনের উৎকট অভিজ্ঞতা সাধারণত সকলের হয় বলে আমার মনে হয় না, অন্তত প্রার্থনা করি কখনো কারও যেন না হয়। তবে আমাকে আর দশজনের মতো ভাবলে ভুল করা হবে, কারণ আমার মনের গড়নটা ছিল বেশ একটু অস্বাভাবিক ধরনের। আমি যে শ‍ুধু আত্মকেন্দ্রিকই ছিলাম তা নয়, অনেক দিক দিয়ে অকালপক্কও ছিলাম। এর ফলে, যে বয়সে আমার ফুটবলমাঠে সময় কাটাবার কথা সে সময়ে আমি বসে বসে গ‍ুর‍ুগম্ভীর নানারকম সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাতাম। আমার তখনকার মানসিক দ্বন্দ্বের প্রকৃত র‍ূপটা এখন অনেকটা বুঝতে পারি।

৪১