পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সকলেরই দিন গিয়েছে, এখন পালা এসেছে শ‍ূদ্রের—এতদিন পর্যন্ত যারা সমাজে শ‍ুধু অবহেলাই পেয়ে এসেছে। তিনি আরো বলতেন, উপনিষদের বাণী হল, ‘নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ’—চাই শক্তি, নইলে সবই বৃথা। আর চাই নচিকেতার মতো আত্মবিশ্বাস। অলসপ্রকৃতির সন্ন্যাসীদের তিনি বলতেন, “মুক্তি আসবে ফুটবলখেলার মধ্য দিয়ে, গীতাপাঠ করে নয়।” বিবেকানন্দের আদর্শকে যে সময়ে জীবনে গ্রহণ করলাম তখন আমার বয়স বছর পনেরোও হবে কি না সন্দেহ। বিবেকানন্দের প্রভাব আমার জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিল। তাঁর আদর্শ ও তাঁর ব্যক্তিত্বের বিশালতাকে পুরোপুরি উপলব্ধি করার মতো ক্ষমতা তখন আমার ছিল না—কিন্তু কয়েকটা জিনিস একেবারে গোড়া থেকেই আমার মনে চিরকালের জন্য গাঁথা হয়ে গিয়েছিল। চেহারায় এবং ব্যক্তিত্বে আমার কাছে বিবেকানন্দ ছিলেন আদর্শ পুরুষ। তাঁর মধ্যে আমার মনের অসংখ্য জিজ্ঞাসার সহজ সমাধান খুঁজে পেয়েছিলাম। প্রধান শিক্ষকমশাইয়ের আদর্শকে তখন আর খুব বড় বলে মনে করতে পারছিলাম না। আগে ভাবতাম প্রধান শিক্ষকমশাইয়ের মতো দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করব, তাঁর আদর্শে জীবনকে গড়ে তুলব। কিন্তু এখন স্বামী বিবেকানন্দের পথই আমি বেছে নিলাম।

বিবেকানন্দ থেকে ক্রমে তাঁর গ‍ুর‍ু, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের প্রতি আমার মনোেযোগ আকৃষ্ট হল। বিবেকানন্দ বক্ত‌ৃতা দিয়েছেন, চিঠিপত্র লিখেছেন, অনেক বই লিখেছেন—সকলেই সেগুলি পড়তে পারে। কিন্তু রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এসব কিছুই করেননি, কারণ তিনি, বলতে গেলে, প্রায় নিরক্ষর ছিলেন। তিনি শ‍ুধু, তাঁর আদর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করে গেছেন—সেই আদর্শকে সাধারণের মধ্যে প্রচার

৪৪