পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বেরিয়ে এলাম। মায়ের বেলাতেও একই ব্যাপার ঘটল। আজ পর্যন্ত জানি না সে সময়ে বাবা কিংবা মা আমার সম্বন্ধে কী ভেবেছিলেন। প্রত্যেকদিন সকালে উঠে এই কর্তব্যটি সমাপন করতে আমাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। বাড়ির সকলেই, এমন কি চাকরবাকরেরা পর্যন্ত আমার মতো বেয়াড়া ছেলেকে হঠাৎ এরকম বাধ্য হয়ে যেতে দেখে নিশ্চয়ই খুব আশ্চর্য হয়েছিল। এই ব্যাপারটার পেছনে যে একজন সাধুর অলক্ষিত প্রভাব কাজ করছিল আশা করি কেউ ঘুণাক্ষরেও তা বুঝতে পারেনি। কিছুদিন পরে, যখন খতিয়ে দেখতে গেলাম উপদেশগলি পালন করে আমার কোনো লাভ হয়েছে কি না তখন নিরাশ হতে হল। অগত্যা এসব ছেড়েছুড়ে দিয়ে আবার রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দকে নিয়ে পড়লাম। মনকে বোঝলাম—সংসার সম্বন্ধে সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত হতে না পারলে মুক্তি অসম্ভব।

ধর্মচচা বলতে আমি শধু যোগ অভ্যাসকেই জানতাম—একথা বললে ভুল বলা হবে। অবশ্য কিছুদিন আমি যোগ নিয়ে একটু বেশি রকম মেতে উঠেছিলাম, কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিলাম আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য জনসেবা অপরিহার্য। এই ধারণা বিবেকানন্দই আমাকে দিয়েছিলেন, তিনিই জনসেবা তথা দেশসেবার আদর্শ প্রচার করেছিলেন। শুধু তাই নয়, দরিদ্রের সেবাকেও তিনি অবশ্য কর্তব্য বলে স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলতেন দরিদ্রের মধ্য দিয়ে ভগবান আমাদের কাছে আসেন, কাজেই দরিদ্রের সেবা মানেই ভগবানের সেবা। মনে পড়ে বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি ভিক্ষুক, ফকির, সাধুসন্ন্যাসী—সকলের সঙ্গে অত্যন্ত অন্তরঙ্গ হতে চেষ্টা করতাম। বাড়িতে এরা কেউ এলে তাদের যথাসাধ্য দান করে মনে মনে অদ্ভ‌ুত আনন্দ পেতাম।

৫২