পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভোগসুখের প্রতি মনের স্বাভাবিক আকর্ষণ—এই দুয়ের প্রতিকুলতায় জীবনের আদর্শকে অক্ষুন্ন রাখা আমার পক্ষে প্রাণান্তকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিশেষ করে স্কুল-জীবনের শেষের দিকটা তো আমাকে চুড়ান্ত মানসিক অশান্তি ভোগ করতে হয়েছে। অবিশ্যি কোনো একটা আদর্শকে জীবনে সফল করে তুলতে গেলে সকলকেই এই রকম অশাস্তি ভোগ করতে হয়। কিন্ত‌ু দুটো কারণে আমার বেলা অশাস্তির মাত্রাটা একটু বেশি হয়ে পড়েছিল। প্রথমত আমার বয়স ছিল অল্প। দ্বিতীয়ত সবগুলি বাধা যেন একসঙ্গে এসে আমাকে ঘিরে ধরেছিল। একই সঙ্গে দুটো বাধার সঙ্গে লড়তে না হলে বোধ হয় এত কষ্ট পেতে হত না। কিন্তু ভাগ্যের লিখনকে তো আর খণ্ডান যায় না।

এইভাবে দুদিক সামলাতে আমাকে যে কী পরিমাণ বেগ পেতে হয়েছে তা বলবার নয়। বিশেষ করে আমার মতো প্রখর-অনভূতিসম্পন্ন ছেলের পক্ষে এই সংঘাত প্রায় মারাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমি যে ভেঙে পড়িনি সেটা বোধ হয় নেহাতই ভাগ্যের জোয় কিংবা নিয়তির নির্দেশ। জীবনের এই অগ্নিপরীক্ষায় আমি প্রায় অক্ষত অবস্থাতেই বেরিয়ে এসেছি। পিছনে ফেলে আসা দুঃস্বপ্নের মতো এই দিনগুলির কথা ভাবলে এখন বুঝতে পারি আমার জীবনে এই অভিজ্ঞতার দরকার ছিল। এই সংগ্রামে আমাকে বহু কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে সত্যি, কিন্তু তার পুরস্কার আমি পেয়েছি—আগের চেয়ে আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে, আর আমার জীবনের মূল কয়েকটি নীতিও আমি স্থির করতে পেরেছি। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বাপ-মা এবং অভিভাবকদের একটা বিষয়ে সাবধান করে দিতে চাই—অভিমানী এবং অনুভূতিসম্পন্ন ছেলেদের সঙ্গে তাঁদের ব্যবহার

৬৪