পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমি সহজেই পার হয়ে এসেছি। অবিশ্যি তাই বলে মনে করবেন না সব সংশয়েরই চিরকালের জন্য অবসান ঘটেছিল। দুঃখের বিষয়, আমার মনকে সম্পূর্ণ সংশয়মুক্ত করা কোনোকালেই সম্ভব হয়নি, হওয়ার কথাও নয়, কারণ সচেতনভাবে বাঁচতে হলেই পদে পদে সংশয় দেখা দেবে। মানুষের কাজই এই সংশয় জয় করা। অন্তর্দ্বন্দ্ব আমার মধ্যে সবচেয়ে প্রকট হয়ে উঠেছিল যৌনপ্রবৃত্তির ক্ষেত্রে। পার্থিব ভোগসুখে বর্জন করে কোনো মহৎ উদ্দেশ্যে জীবন উৎসর্গ করার সিদ্ধান্তে পৌঁঁছতে আমাকে মোটেই বেগ পেতে হয়নি। এই প্রকল্প জীবনের উপযুক্ত করে শরীর মনকে গড়ে তুলতেও আমাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি। কিন্তু গোলমাল বেধেছিল যৌনপ্রবৃত্তি দমন করার বেলায়—মানুষের স্বাভাবিক একটি প্রবৃত্তিকে দমন করা কি মুখের কথা! কী প্রাণান্তকর দ্বন্দ্ব যে আমার সারাজীবন ধরে চলেছে তা বোঝানো যায় না।

যৌনসম্ভোগ বর্জন তো বটেই, যৌনকামনা দমন করাও আমার মতে তেমন দুঃসাধ্য নয়। কিন্তু আমাদের দেশের যোগীঋষিদের মতে আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য শুধু এই যথেষ্ট নয়। যে মানসিক আবেগ এবং সহজপ্রবৃত্তি থেকে যৌনকামনার উদ্ভব তাদের এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে যাতে সবরকম যৌন আকর্ষণের বিলুপ্তি ঘটে—শরীর মন যৌনচেতনার উর্ধ্বে ওঠে। কিন্তু এ কি কখনো সম্ভব, না এ শুধু কষ্টকল্পনা? রামকৃষ্ণ বলে গেছেন, এ সম্ভব, এবং শরীর মনকে এভাবে পবিত্র না করলে আধ্যাত্মিক উন্নতির চরমে পোঁছন যায় না। শোনা যায় অনেকেই রামকৃষ্ণের চরিত্রবল এবং আধ্যাত্মিক সিদ্ধি নানাভাবে পরীক্ষা করবার চেষ্টা করেছিলেন— কিন্তু যতবারই তাঁকে সুন্দরী স্ত্রীলোকদের মাঝখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দেখা

৬৭