পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কলকাতায় রাতের পর রাত বাইরে কাটিয়েছি—অভিভাবকদের অনুমতি নেবার কোনো প্রয়োজন বোধ করিনি। কটকে ফিরে আমি নিজেকে শুধরে নিলাম। একবার বাবা-মা কটকের বাইরে কোথায় গিয়েছেন, কয়েকজন বন্ধু এসে জানাল কাছেই একটি গ্রামে কলেরা লেগেছে, সেখানে শ‍ুশ্র‌ূষা করতে যেতে হবে। আমাদের দলে কোনো ডাক্তার ছিল না। শুধু আধা-ডাক্তার গোছের একজন ছিল। থাকাবার মধ্যে তার ছিল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার একটি বই, এক বাক্স হোমিওপ্যাথি ওষুধ আর ছিল প্রচুর সাধারণজ্ঞান। আমি তখুনি রাজী হয়ে গেলাম। বাবার অবর্তমানে কাকা ছিলেন আমার অভিবাবক, তাঁকে বললাম কয়েকদিনের জন্য একটু বেড়াতে যাচ্ছি। আমি যে কলেরার রোগীর শ‍ুশ্র‌ূষা করতে যাচ্ছি তিনি টের পাননি, কাজেই সহজেই মত দিলেন। আমি সপ্তাহখানেক মাত্র বাইরে ছিলাম, কারণ আমাদের আর কয়েকদিন পরেই কাকা আমাদের আসল উদ্দেশ্য জানতে পেরে আমার আর এক কাকাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য। বহু খোঁজাখুঁজি করে তবে তাঁরা আমাদের নাগাল পেয়েছিলেন।

তখনকার দিনে লোকে বিশ্বাস করতে চাইত না যে কলেরা সারানো যায়। কাজেই কলেরার রোগীর শ‍ুশ্র‌ূষা করতে সহজে কেউ এগিয়ে আসত না। এদিক থেকে আমাদের দলটি ছিল সম্পূর্ণ ভয়শূন্য। বলতে গেলে কলেরার ছোঁয়াচ এড়াবার জন্য আমরা কোনো রকম সাবধানতাই অবলম্বন করিনি—এক সঙ্গেই সবাই থাকতাম, খেতাম। রোগের চিকিৎসা আমরা সামান্যই করতে পেরেছিলাম। আমরা পৌঁছবার আগেই অনেক রোগী মারা গিয়েছিল এবং যাদের আমরা শ‍ুশ্র‌ূষা করেছিলাম তাদের মধ্যেও বেশির ভাগই রাঁচেনি। যাই হোক,

৮৩