পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৪৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গিরি-গোৱৰ্দ্ধন। মথুরার পশ্চিমে ৬ ক্রোশ বা ১২ মাইল দূরে গোবৰ্দ্ধন ক্ষেত্ৰ অৱস্থিত । গোবৰ্দ্ধন পৰ্ব্বত অতি উচ্চ নহে । দৈর্ঘ্যে দেড় ক্রোশ হইবে । পপর্বতটি বেলে পাথরের । পৰ্ব্বতের পাশ্বদেশ কিঞ্চিৎ দূরারোহ হইলেও দৈর্ঘ্যের সীমাদ্বয় হইতে সহজেই আরোহণ করা যায় । পর্বতের পাশ্ব দিয়া : যখন আমরা চলিতেছিলাম, তখন ভগবানের চিরশ্রঞ্চত গোবৰ্দ্ধন-লীলার কথা স্মরণ হইতেছিল। . কল্পনায় যেন দেখিলাম, এক্ট বৃহৎ পৰ্বত ছত্রাকারে উদ্ধে উত্তোলিত, নিম্নে অসংখ্যজন-মানব-গোমহিষাদি অবস্থিত, মধ্যে - ভগবান বাম হস্তের কনিষ্ঠাঙ্গুলিতে পর্বতের ভার ধারণ করিয়া আছেন । চারিদিকে ইন্দ্রের রোষাগ্নি গলিয়া মুষলধারে বৃষ্টির আকারে দেশ ভাসাইয়া দিতেছে— আর শ্ৰীকৃষ্ণ ইন্দ্রের স্পৰ্দা দেখিয়াই যেন মৃদুহাস্যে শান্ত দৃষ্টিতে আশ্ৰিতগণের প্রতি চাহিয়া আছেন । ব্ৰজবাসী সকলের মুখেই ভয়-বিস্ময়স্নেহ স্পষ্ট দেদীপ্যমান হইয়াছে ! সকলেই উৎকষ্ঠিত হইয়া আগ্রহভরে ভগবানের মুখচন্দ্র নিরীক্ষণ করিতেছেন : এক দৃষ্টিতে গোবৰ্দ্ধন দেখিতে-দেখিতে চলিতেছি আর অন্তরের এই মানস-পটখানি যেন সম্পূর্ণরূপে অঙ্কিত দেখিতে পাষ্টতেছি ! মন যেন মনের অজ্ঞাতে এই মানস-পটের সৌন্দর্ঘ্যে মুগ্ধ হইয়া গিয়াছে ! চৰ্ম্ম-চক্ষুতে পর্দাতের প্রস্তরময় রূপ, তাহার উপর গো-গোবৎসের তৃণ-ভক্ষণ ও অজাকুলের উল্লম্ফন, ব্ৰজশিশুর ছুটাছুটি, স্পষ্টই দেখিতে পাইতেছি বটে। কিন্তু অন্তর্দষ্টিতে ঐ মানস-পটও এতটা স্পষ্ট ফুটিয়া উঠিয়াছে যে চৰ্ম্মচক্ষুর সাহায্য না পাইলেও বহিদৃশ্যের সঙ্গে যুগপৎ তাহারও সর্বাঙ্গ সম্পূর্ণ স্পষ্ট দেখিতে পাইতেছি ! সময়ে সময়ে অন্তদৃষ্টির শক্তি নিমেষের জন্য এতটা প্ৰবল হইতেছে যে, চৰ্ম্মচক্ষু দুইটি সম্পূর্ণ বিস্ফারিত থাকিলেও দিবসের প্রদীপ্ত রৌদ্রে উদ্ভাসিত বহিদৃশ্যই হারাইয়া ফেলিতেছি, মানসপটেই মন ডুবিয়া যাইতেছে! এই মানস-প্রত্যক্ষই ধ্যানের সফলতা আনিয়া দেয়, সমাধির পথে সাধককে পলে পলে অগ্রসর করে । । গোবৰ্দ্ধন গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে গোবৰ্দ্ধন পৰ্বতের পাশ্বে আসিয়া যখন আমরা পহুছিলাম, তখনী বহিদৃশ্য প্রবল হইয়া উঠিল, মানস-পট অন্তর হইতে হঠাৎ সরিয়া গেল, সম্মুখে এক সুদৃশ্য প্রস্তর সৌধ দর্শন করিয়া চক্ষু ও মন একবারে হঠাৎ তাহাতেই আকৃষ্ট হইয়া পড়িল। QOS