পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৯০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারত-ভিত্রিমণ । কিন্তু দারিদ্র্যের দারুণ কাষাঘাতে ইহাকে সতত মিয়মাণ থাকিতে হইত। ধনলাভার্থ ইনি হাম্পি নগরস্থ ভুবনেশ্বরী দেবীর মন্দিরে দারুণ তপস্যা করিতে আরম্ভ করেন, ইহার স্তবে দেবী স্বপ্নে ইহাকে আদেশ দেন যে “এ জন্মে তোমার ধনলাভ হইবে না ; পর-জন্মে। ধনলাভ করিতে পরিবে ।” মাধব দেবীর স্বপ্নাদেশ অবগত হইয়া তন্মুহুর্তেই হ্যাম্পী নগরী পরিত্যাগ পূর্বক শৃঙ্গেরী মঠে উপনীত হন এবং তথায় সন্ন্যাস ধৰ্ম্ম গ্রহণ করেন, এবং পরিশেষে এই মঠেই জগদগুরু বিদ্যারণ্য নামে প্ৰসিদ্ধি লাভ করেন । মাধবাচাৰ্য্য জম্মুকেশ্বরের মৃত্যুর পর যখন জ্ঞাত হইলেন যে সমগ্র দেশে ভয়ানক অরাজকতা উপস্থিত হইয়াছে, মুসলমানগণ স্বকীয় আধিপত্য দাক্ষিণাত্যে বিস্তৃত করিবার জন্য অগ্রসর হইতেছে, তখন এই মহাতপা ধ্যানপয়ায়ণ মহাপুরুষের ধ্যানাসন বিচলিত হইল, তিনি শৃঙ্গেরী মঠের নিভৃত সাধনপীঠ পরিত্যাগ পূর্বক বিশৃঙ্খলাপূর্ণ বিজয়নগরের রাজসিংহাসনস্থ বৈষয়িক জঞ্জালরাশি দূরীকরণার্থ পুনরায় অসীম বলশালিনী শক্তিরূপ জগন্মাতা ভুবনেশ্বরীর কমল চরণ-প্ৰান্তে হাম্পিতে আসিয়া উপনীত হইলেন। স্বদেশ হিতৈষী মহাত্মার নিকট মোক্ষলাভ ও অধিক শ্রেষ্ঠ বলিয়া বিবেচিত হইল না । মাতৃভূমির প্রিয়-সন্তান আজ মাতৃভূমির মঙ্গলোদেশ্যে ধৰ্ম্ম, মোক্ষ বিসৰ্জন দিয়া মায়ের চরণপ্রান্তে দেশের বেদন জানাইয়া প্রার্থনা করিতে লাগিলেন, প্ৰহরের পর প্রহর উত্তীর্ণ হইতে লাগিল, অবশেষে এই সর্বত্যাগী তাপসের ঐকান্তিক ভক্তির আহবানে জগন্মাতা বিচলিত হইলেন, তিনি বিদ্যারণ্যকে চিন্ময়ীভাবে দর্শন দিয়া বলিলেন “ভয় নাই বৎস, তোমার মহৎকামনা পূর্ণ হইবে, তুমি মাতৃভূমির মঙ্গল সাধন করিতে সক্ষম হইবে । তুমি যখন মাধবাচাৰ্য্য ছিলে, তখন আমি তোমাকে ধন প্ৰদান করি নাই, এখন তোমার পুনর্জন্ম হইয়াছে, তুমি আর এখন ধনপ্রার্থী মাধবাচাৰ্য্য নহ, এখন তুমি সর্বত্যাগী নিষ্কাম সন্ন্যাসী, তোমার এই নবজীবন লাভের সঙ্গে সঙ্গে তোমার প্রার্থনা পূর্ণ হইল ; ষাও বৎস, কৰ্ম্মে প্ৰবৃত্ত হও, তোমার দ্বারা বিজয়নগর দিন দিন শ্ৰীসম্পন্ন হইয়া জগতে অক্ষয় কীৰ্ত্তিলাভ করিতে পারগ হইবে।” বিদ্যারণ্য মনোরথ ৬৪° ·