পাতা:ভাষা বিজ্ঞান নামক বাঙ্গালা ভাষার ব্যাকরণ.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ ৫ ]

  মনুষ্যের উন্নতি পক্ষে কথ্য ও লেখ্য উভয় প্রকার ভাষাই অতীব প্রয়োজনীয়। এই উভয়ের মধ্যে আবার কথ্য ভাষা সমধিক প্রয়োজনীয়। কথ্য ভাষার অভাবে শিক্ষা হইতে পারে না; সুতরাং কথ্য ভাষার অভাবে লেখ্য ভাষা উৎপন্ন হইতে পারে না; যদি বা একবার কথ্য ভাষার সাহায্যে লেখ্য ভাষা উৎপন্ন হয় এবং তাঁহার পর কথ্য ভাষা লুপ্ত হয়, তবে লেখ্য ভাষাও সঙ্গে সঙ্গে লোপ পায়? কথ্য ভাষা অপেক্ষাকৃত সহজ অথচ অধিকতর হৃদয়গ্রাহী। কথোপকথনে মনের ভাব যত উত্তম রূপে ব্যক্ত হয়, লিখন দ্বারা তত উত্তম রূপে ব্যক্ত করা যায় না। লেখ্য ভাষার অভাবে কোন কার্য্যই সম্পূর্ণ অসাধ্য হয় না। শিবাজী, মহম্মদ ও হাইদার আলি লেখা পড়া না জানিয়াও স্ববিখ্যাত রাজা হইয়াছিলেন। লেখ্য ভাষা স্থষ্টির পূর্ব্বে ব্রাহ্মণের কেবল শ্রবণ ও স্মরণ করিয়া বেদ ও মনুসংহিতা নামক দুই খানি প্রকাণ্ড গ্রন্থ বহুকাল প্রচলিত রাথিয়া ছিলেন, তজ্জন্তই ঐ দুই প্রাচীনতম গ্রন্থের নাম শ্রুতি ও স্বতি হইয়াছে। এখনও বর্ণজ্ঞানহীন অনেক লোককে বিলক্ষণ চতুর এবং কার্যক্ষম দেখা যায়। 屬 ভাষা দ্বারাই শিক্ষা দেওয়া যায় এবং শিক্ষাই মনুষ্যের উন্নতির প্রধান কারণ। ইতর প্রাণীরা এক জনের লব্ধ জ্ঞান অন্যকে দিতে পারে না। এই জন্তই তাঁহাদের উন্নতি নাই। মঙ্গুষ্যেরা স্ব স্ব উপার্জিত জ্ঞান অন্যকে শিক্ষা দিতে পারে। শিষ্য সেই জ্ঞান শিক্ষা প্রাপ্ত হইয়া নিজে তাহ বর্দ্ধিত করিয়া আবার অন্যকে শিক্ষা দিতে পারে। এই কারণে মনুষ্যের ক্রমে জ্ঞান বৃদ্ধি এবং তদানুষঙ্গিক উন্নতি হয়। পূর্ব্বগত ব্যক্তিগণের উপার্জিত জ্ঞানের নামই বিদ্যা এবং শিক্ষা দ্বারা তাহ প্রাপ্ত হওয়ার নামই বিদ্যা উপার্জন। গুরু হইতে শিষ্যের জ্ঞানাধিক্যই উন্নতির লক্ষণ এবং তদপকর্ষই অবনতির কারণ।  মনের ভাব ব্যক্ত করাই ভাষার প্রধান উদিশু কিন্তু ভাষার আলোচনা দ্বারা আরো অনেক বিষয় জানা যায়। পূর্ব্বে উক্ত হইয়াছে যে, মনুষ্য যাযাবর থাকা কালীন পুনঃ পুনঃ দলে দলে পৃথক হইত এবং পৃথক হওয়ার পূর্ব্বোৎপন্ন কথা গুলি সকল দলেই সমান থাকিত আর পরবর্তী কথা ভিন্ন হইত। এক্ষণে নানা জাতির ভাষা সমূহ আলোচনা করিলে কোন কোন জাতি আগে ভিন্ন হইয়াছে আর কোন কোন জাতি পরে ভিন্ন হইয়াছে তাছা জানা যায়।