পাতা:ভাষা বিজ্ঞান নামক বাঙ্গালা ভাষার ব্যাকরণ.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।



[৭]

 ভাষার দ্বারা অনেক প্রাচীন ব্যবহার জানা যায়।  যেমন ছহিতৃ শদের মূলার্থ দোহনকারী ভাবার্থ কন্যা।  তদ্বারা জানা যায় যে প্রাচীন কালে বয়ঃস্থ স্ত্রী পুরুষেরা অন্তান্ত কঠিন কর্ম্ম করিত, গোদোহনাদি সহজ কর্ম্ম কস্তারা করিত। এখন কস্তাগণ দোহন না করিলেও পূর্ব নাম স্থির আছে। ভগিনী (ভজ × ইন স্ত্রীলিঙ্গে) শব্দের অর্থ আলোচনা করিলে জানা যায় যে আদৌ ভ্রাতারা ভগিনীকেই স্বভাব সিদ্ধ পত্নী জ্ঞান করিত। তৎপরে ভগিনী বিবাহ নিষিদ্ধ হইলেও পূর্ব নাম চলিতেছে। ভৈল শব্দ হইতে জানা যায় যে প্রথমে তিলের নির্য্যাসই এক মাত্র তৈল ছিল। পরে তাঁদৃশ স্নেহ পদার্থ যে কোন বস্তু হইতে উৎপন্ন হউক তাহাকেই তৈল বলা যাইতেছে। গোল্লা শব্দের গোঁহত্য কার্য্য এক অর্থ এবং অন্য অর্থ অতিথি-সেবা। অতি পূর্ব্বে গোমাংস দ্বারা অতিথি-সৎকার নিয়ম ছিল। গোবধ নিষিদ্ধ হওষার পরেও অতিথি-সেবার গোল্লা নাম চলিত আছে। মিথ্যা শব্দের মূলার্থ রহস্ত বাক্য (মিথঃ রহসি) ভাবার্থ অমৃত কথা। ইহাতে জানা যায় যে প্রথমে কেবল রহস্ত উপলক্ষেই অপ্রকৃত কথা বলা হইত। পরে যে কোন উপলক্ষেই অসত্য বাক্য বলা যাউক তাহাই মিথ্যা গণ্য হয়। ——জাতির মধ্যে উৎপন্ন হেতু সেই ভ্রম তদ্ধর্মাবলম্বিগণ প্রাপ্ত হইয়াছে। বাস্তবিক জলপ্লাবন সমুদ্র হইতে দূরবত্তী দেশে হয় নাই। এবং তদেশবাসীরা নেয়ার বংশ নহে। মহাভারতের মুঘল পর্বে ইহার প্রমাণ পাওয়া যায়। শ্রীকৃষ্ণের স্বর্গারোহণের পর সপ্তাহ মধ্যে কলিযুগ সন্ধ্যা জনিত জলপ্লাবন হইয়া দ্বারকাপুরী নষ্ট হয় কিন্তু সমুদ্র হইতে দুরবর্তী হস্তিনা নগরে জল প্লাবন হয় নাই। চীন দেশেও ঐরূপ প্রবাদ আছে যে, জলে সমুদ্র তীরবর্তী কাণ্টন নগর প্লাবিত হইয়া ছিল কিন্তু প্রাচীন রাজধানী-নাংকিন (নাস্কিন) নগর সমুদ্র হইতে দূরে অবস্থিতির জন্ত তাহার কোন অনিষ্ট হয় নাই। হিন্দু ও চীন জাতি নোয়ার পূর্ববর্ত্তী লোক; স্বতরাং ইহারা যে নোয়ার বংশ নহে তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। অতএব ইহাই যুক্তি সিদ্ধ অনুমান যে পরমেশ্বর যেমন বৃক্ষ লতা নানা দেশে স্বষ্টি করিয়াছেন, সেই রূপ প্রাণিগণকেও নানা দেশে স্বষ্টি করিয়াছেন। সমস্ত মনুষ্যাদি প্রাণিগণের আদিম পুরুষেরা যে একই সময়ে উৎপন্ন হইয়াছে ইহাও বোধ হয় না। মনুষ্য প্রথম স্থষ্টি কালে তাহদের ভাষা ছিল না। তৎকালীয় অবস্থা প্রথম মনুষ্যেরা নিজ সন্তানদিগকে জানাইতে পারে নাই হতরাং তৎকালীর বৃত্তাপ্ত সম্পূর্ণ অজ্ঞেয়। স্মৃষ্টি প্রকরণ সম্বন্ধে যে খাহা বলে সমস্তই আনুমানিক বা কাল্পনিক।