পাতা:মধ্যভারত - জলধর সেন.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভার পাঁচটা সাঁইত্রিশ মিনিটের সময় যখন উজ্জয়িনী ষ্টেসনে নামলাম, তখনও রাত্রির অন্ধকার দূর হয় নাই ; কুয়াসায় চারিদিক আচ্ছন্ন ; রাস্তার আলোগুলি গায়ে-মুখে কালী মেখে ঝিমুচ্ছিল। সেই ভয়ঙ্কর শীতে পথে জনমানবের দেখা নেই। আমাদের সঙ্গে যে সব যাত্রী সেই গাড়ী থেকে নেমেছিল, তারা বোধ হয় শীতের ভয়েই পথে না নেমে মুসাফিরখানায় আশ্রয় নিয়েছিল। আমরা শীতে কম্পান্বিত-কলেবর হ’লেও ও-দেশের মুসাফিরখানায় ঢুকতে সাহসী হইনি ; বিশেষতঃ, আমাদের সঙ্গী, হরিদাস বাবুর মাষ্টার মশাইরা বললেন, বাসা বেশী দূর নয়, তিনচার মিনিটের পথ । তখন আর ষ্টেসনে অপেক্ষা করতে কেউই চাইলেন না । ষ্টেসনের বাইরে সে দেখা গেল, সেই শীতের মধ্যে একখানি টঙ্গ যাত্রীর আশায় দাড়িয়ে আছে। তার প্রতি কৃপা-পরবশ হয়েই হোক বা আমাকে শীতে একেবারে জড়সড় দেখেই হোক, সঙ্গীরা সেই টঙ্গাওয়ালাকে ধরলেন। বেশী দূর নয়, বেশ যেতে পারব, টঙ্গার কোন দরকার নেই।-কেউ সে কথা কানে তুললেন না। আমাকে টঙ্গায় চাপিয়ে দিয়ে আমাদের পথের অন্যান্য সঙ্গী খুজতে গিয়ে দেখা গেল, হরিদাস বাবুর পুত্ৰ শ্ৰীমান আনন্দমোহনের পাত্তা পাওয়া যাচ্ছে না। কেহ বললেন, গাড়ী থেকে নেমেই সে আমাদের অভ্যর্থনার জন্য আগে বাড়ী গিয়েছে। সঙ্গী মাষ্টার বাবুরা বললেন, সে কোন কাজের কথাই নয়, আনন্দমোহন নিশ্চয়ই গাড়ীতে উঠে ঘুমিয়ে পড়েছিল, উজ্জয়িনী ষ্টেসনে নামতে পারে নাই, এগিয়ে চ’লে গিয়েছে ; যেখানে ঘুম ভাঙ্গবে সেখান থেকে ফেরত ট্রেণে আসবে। যে অন্ধকার, আর যে শীত, তাতে নিজেকেই টেনে নামানো যায় না, কোন গাড়ী থেকে কে নামল, কে প’ড়ে রইল, তা ঠিক করা একেবারেই অসম্ভব। তখন আর কি করা যায়, একজন মাষ্টার আমার সঙ্গী হ’লেন।