পাতা:মনু-সংহিতা (ভরতচন্দ্র শিরোমণি).pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা সনাতন হিন্দুধৰ্ম্মর নিগূঢ়য়হস্ত বুঝিষ্ঠে হইলে, মানবধৰ্ম্মশাস্ত্র বা মনুসংহিতার আশ্রয় সকলকেই গ্রহণ করিতে হইবে। যদি চ বেদ, সনাতন ধৰ্ম্মের মূলগ্রন্থ ইহা সকলেই স্বীকার করিয়া থাকেন, তথাপি কেবল বেদের সাহায্যে বর্তমান সময়ে সনাতনধর্মের যথার্থস্বরূপ বিস্পষ্টভাবে বুঝিতে পারা যায় না, কারণ, এখন যথাবিধি বেদের পঠন-পাঠন অত্যয় হইয়া দাড়াইয়াছে। সমগ্র বেদের অর্ধ বুঝিতে হইলে যে সকল সামগ্রীর একান্ত আবগুক, তাহার সম্পাদন বর্তমান সময়ে একান্ত অসম্ভব বলি:লও অত্যুক্তি হয় না। বেদ বুঝিতে হইলে প্রথমতঃ বেদের যে ছয়টি অঙ্গ অর্থাৎ শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ, ছন্দ, নিরুক্ত ও জ্যোতিষশাস্ত্র—তাহার অধ্যয়ন অবগু কৰ্ত্তব্য। তাহ ছাড়া ইতিহাস, পুরাণ প্রভৃতি উপাঙ্গেরও অধ্যয়ন করিতে হইবে। শুধু কি তাহাই! বেদের প্রতিপান্ত গৃহস্থমাত্রেরই কর্তব্য, দর্শ-পূর্ণমা, অগ্নিহোত্র, জ্যোতিষ্টেম প্রভৃতি বহু আড়ম্বরপূর্ণ কৰ্ম্মসমূহেরও বৰ্ত্তমানসময়ে প্রায় লোপ হইয়াছে। ঐ সকল ধৰ্ম্মকার্য্যের প্রকৃত স্বরূপ প্রদর্শক গ্রন্থ ও উপযুক্ত আচার্য্যের অভাববশতঃ বেদার্থের যথাযথ স্বরূপ নির্ণর বর্তমান সময়ে অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার হইয়া পড়িয়াছে। বেদ পড়িয়া—বেদাৰ্থ বুঝয়, সেই সকল বেদার্থের অনুষ্ঠান করা বর্তমান সময়ে একান্ত অসম্ভব বলিলেও চলে, তাহা ছাড়া, বর্তমান সময়ে হিন্দুজাতির মধ্যে যে সকল ধৰ্ম্ম ও আচার সমগ্র ভারতবর্ষে অল্প বা বিস্তর ভাবে অমুষ্ঠিত হইয়া থাকে, তদবিষয়ে বর্তমান সময়ে প্রচলিত বৈদিক গ্রন্থসমূহ একপ্রকার নীরব বলিলেও চলে। শিষ্ট সম্প্রদায় বলিয়া থাকেন যে, বহুকাল হইতে বেদের বহুশাখা বিলুপ্ত হওয়ায় এইরূপ অবস্থা ঘটয়াছে। উহাদের মতানুসারে এই সকল আচার ও ধৰ্ম্মের প্রমাণভূত মূল বেদগ্রন্থের লোপ হইলেও ঐ সকল ধৰ্ম্ম ও আচার এখনও ভারতের বহু প্রদেশে বহুল পরিমাণে উপলব্ধি হইতেছে। এই সকল আচার ও ধৰ্ম্মাম্বুষ্ঠানের তত্ত্ব জানিতে হইলে, বর্তমান সময়ে ধৰ্ম্মশাস্ত্র, পুরাণ ও তন্ত্রাদির সাহায্যই গ্রহণ করিতে হইবে। দান, ব্রত ও পূৰ্বরূপ ধৰ্ম্মের স্বরূপ পুরাণশাস্ত্রে বহুলভাবে বর্ণিত হইয়াছে-ইহা সত্য। কিন্তু, ঐ সকল পুরাণ-বর্ণিত ধৰ্ম্ম অনুষ্ঠান করিতে হইলে অধিকারী হওয়া আবশ্বক। অধিকারী কে হইয়া থাকে –সদাচারসম্পন্ন ও দশবিধসংস্কারযুক্ত না হইলে, ঐ সকল পুরাণাদি-প্রদর্শিত ধর্মের অনুষ্ঠানে প্রকৃতভাবে অধিকারী হইতে পারা যায় না। সেই সদাচার ও সংস্কার-সমুহের প্রধানভাবে জ্ঞাপক যে শাস্ত্র, তাহাকেই ধৰ্ম্মশাস্ত্র বলা যায়। ধৰ্ম্মণাস্ত্রে ইহা ছাড়া বিস্তৃতভাবে প্রায়শ্চিন্তাদিরূপ অবগুকৰ্ত্তব্য কৰ্ম্মসমূহেরও স্বরূপ যথাযথভাবে বর্ণিত হইয়াছে। এই কারণে ধর্থশাস্ত্রের উপরেই বর্তমান সময়ে প্রচলিত সনাতন হিন্দুধর্মের অস্তিত্ব প্রধান ভাবেই নির্ভর করিতেছে, এই ধৰ্ম্মশাস্ত্র বা স্মৃতিশাস্ত্র-প্রণেতা ঋষিগণের মধ্যে ভগবান মন্ত্ৰই সৰ্ব্বপ্রধানরূপে পরিগণিত ইংরা থাকেন। "শাস্ত্রকারগণের মধ্যে মন্থর এই প্রাধাত সৰ্ব্বাসিন্মত, বৈদিক গ্রন্থসমূহের মধ্যেও মন্থর প্রাধান্তস্থঃক বাক্য দেখিতে পাওয়া যায়। ধৰ্ম্মশাস্ত্রকারগণও মন্থরই প্রাধান্ত স্বীকার করিয়াছেন।