পাতা:ময়ূখ - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১০৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১০০
ময়ূখ

প্রখর। দুর্গ মধ্যে শুভ্র মর্ম্মরনির্ম্মিত অসংখ্য প্রাসাদশ্রেণীর অগণিত বাতায়নপথ সুবর্ণখচিত বহুবর্ণের যবনিকায় আবৃত। বাদশাহ তখন দুর্গমধ্যে, সেইজন্য হরিৎ বর্ণের পতাকা উড়িতেছে, দুর্গের চারিপার্শ্বে এক একজন সেনাপতি সহস্র হস্ত ব্যবধানে সেনানিবাস স্থাপন করিয়াছেন। সর্ব্বদা সুসজ্জিত সৈন্যগণ দুর্গের চারিদিকে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। দুর্গমধ্যে যমুনাতীরে প্রাসাদের অন্তঃপুর, সে স্থানে তাতারী ও তুর্কী প্রতীহারীগণ ভীষণ রৌদ্রে শূন্যমস্তকে দশহস্ত ব্যবধানে দাঁড়াইয়া আছে। দুই তিন জন প্রহরী আসিয়া যুবককে অপেক্ষা করিবার কারণ জিজ্ঞাসা করিল, কিন্তু যুবকের নিকটে বাদশাহী পঞ্জা দেখিয়া দূরে সরিয়া গেল। দেখিতে দেখিতে দুই দণ্ড অতীত হইয়া গেল, যুবকের নিদ্রাকর্ষণ হইল। এই সময়ে দুর্গমধ্যে জহাঙ্গীরি মহলে সেতার বাজিতে আরম্ভ হইল। যুবক মনে করিল যে, বহুদূর বঙ্গদেশে গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতী-সঙ্গমে সে একখানি বৃহৎ বজরার কক্ষে গজদন্তনির্ম্মিত খট্টায় শয়ন করিয়া আছে, আর তাহার পার্শ্বে বসিয়া এক অনিন্দ্য সুন্দরী যুবতী সেতার সিন্ধু ভূপালী বাজাইতেছে। ক্ষণকাল পরে যুবকের তন্দ্রার ঘোর ছাড়িয়া গেল; সে চমকিত হইয়া উঠিয়া দাঁড়াইল; কিন্তু তথাপি সেতারের আওয়াজ আসিতে লাগিল; যুবক চক্ষু মার্জ্জনা করিল। তখনও সিন্ধু ভূপালী বাজিতেছিল। হঠাৎ জহাঙ্গীরি মহলের একটি গবাক্ষের যবনিকা সরিয়া গেল, তাহাতে তাতারী প্রতীহারী ও একটি যুবতীর মুখ দৃষ্ট হইল।