পাতা:ময়ূখ - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৭৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
দশম পরিচ্ছেদ
৬৯

ছিলেন চলুন, বজ্‌রায় অল্পদূরে ভ্রমণ করিয়া আসি।” “চল।”

 মাল্লারা বজরা ছাড়িয়া দিল, বজরা দক্ষিণদিকে চলিল। তখন সন্ধ্যা হইয়া আসিয়াছে, ঘন কুজ্ঝটিকায় গঙ্গাবক্ষ আচ্ছন্ন। গঙ্গাবক্ষ শূন্য, ফিরিঙ্গির ভয়ে একখানিও নৌকা সপ্তগ্রাম ত্যাগ করে নাই। সহসা বজরার পশ্চাতে বহু তরণ্ডের শব্দ শ্রুত হইল। বজরার মাঝি বৃদ্ধকে জানাইল যে পশ্চাতে একখানি বড় নৌকা দ্রুতবেগে আসিতেছে। বজরার মুখ ফিরিল, দেখিতে দেখিতে একখানি বৃহৎ নৌকা আসিয়া পড়িল। নৌকাখানি ছিপ্‌ নহে, পশ্চিমবঙ্গে পারাপারের জন্য যেরূপ বৃহৎ নৌকা ব্যবহৃত হইয়া থাকে ইহা সেইরূপ একখানি নৌকা। নৌকা বজরার পার্শ্বে আসিয়া পৌঁছিলে, বৃদ্ধ দেখিলেন যে তাহাতে পঞ্চাশ ষাটজন অস্ত্রধারী পুরুষ দাঁড় টানিতেছে, মাঝির পার্শ্বে একজন শুভ্রবসনপরিহিত বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ দাঁড়াইয়া আছেন। বৃদ্ধ নৌকা দেখিয়া বিম্মিত হইলেন এবং বজরার মাঝিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মাঝি, এ কোথাকার নৌকা?” মাঝি পূর্ব্ববঙ্গের অধিবাসী, সে কহিল, “হুজুর, মুই কতি পারিনে, উত্তরের নাও হবে।”

 এই সময়ে নৌকা আসিয়া বজরার পার্শ্বে দাঁড়াইল; সেই ব্রাহ্মণ বৃদ্ধকে কহিলেন, “মহাশয়, আপনি বজরা লইয়া কোথায় যাইতেছেন?” বৃদ্ধ কহিলেন, “আমি সপ্তগ্রাম হইতে জলপথে ভ্রমণ করিতে আসিয়াছি, সপ্তগ্রামে ফিরিয়া যাইব।”