পাতা:ময়ূখ - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৮৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭৬
ময়ূখ

শুষ্ক বস্ত্র পরাইয়া দিল। পাগলিনীকে রোগীর শিয়রে বসাইয়া বিনোদিনী হকিম ডাকিতে গেল। তাহা শুনিয়া একজন প্রতিবেশিনী কহিল, “ফিরিঙ্গি মহলে ত বিনোদিনীর একচেটিয়া পসার, একটা ফিরিঙ্গি হকিম ডাকিয়া আনিল না কেন?, তাহা হইলে দুদিনে সারিয়া যাইত।” পাগলিনী ব্যগ্র হইয়া তাহাকে কহিল, “মা, তুমি গিয়া ফিরিঙ্গি হকিম ডাকিয়া আন না।” উত্তরে প্রতিবেশিনী হাত নাড়িয়া, মুখ নাড়িয়া, কঙ্কন বলয় নাড়িয়া, সরলা পাগলিনীকে বুঝাইয়া দিল যে জন্য বিনোদিনী বৈষ্ণবীর হুগলীর ফিরিঙ্গি মহলে এত পসার তাহা তাহার পুণ্যময় বংশে ঊর্দ্ধতন বা অধস্তন চতুর্দ্দশ পুরুষে হইবে না। প্রতিবেশিনী গর্জ্জন করিতে করিতে চলিয়া গেল; পাগলিনী আহত যুবককে লইয়া বসিয়া রহিল।

 বহুক্ষণ পরে যুবক চক্ষু মেলিল, তখন পাগলিনী তাহার শিয়রে বসিয়া ব্যজন করিতেছিল। যুবক তাহাকে দেখিয়া কহিল, “ললিতা, তবে স্বপ্ন নহে?” পাগলিনী তাহার কথা বুঝিতে না পারিয়া বিস্মিতা হইয়া তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। যুবক আবার কহিল, “তুমি এ বেশ কোথায় পাইলে ললিতা?”

 একমাস পাগলিনীকে কেহ ললিতা বলিয়া সম্বোধন করে নাই। বহুদিন পরে নাম শুনিয়া ললিতার সম্মুখ হইতে যেন একটা ঘন আবরণ ধীরে ধীরে সরিয়া যাইতে লাগিল। নাম শুনিয়া তাহার মনে পড়িয়া গেল যে তাহারই এই নাম।