পাতা:মহাত্মা রাজা রামমোহন রায় (সচিত্র) - নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১০৬ মহাত্মা রাজা রামমোহন রায়ের জীবনচরিত ব্ৰহ্ম সৰ্ব্বশক্তিমান বলিয়া মুক্তিধারণ করিতে পারেন, ইহা যুক্তি ও শাস্ত্ৰবিরুদ্ধ । রামমোহন রায় এবিষয়ে বলিয়াছেন,-“জগতের সৃষ্ট্যাদি বিষয়ে ব্ৰহ্ম সর্বশক্তিমান বটেন, কিন্তু তঁাহার। আপনার স্বরূপের নাশ করিবার শক্তি তাহার আছে, এমত স্বীকার করিলে জগতের ন্যায় ব্ৰহ্ম হইতে ব্ৰহ্মের নাশ হওনের সম্ভাবনা, সুতরাং স্বীকার করিতে হয় ; কিন্তু যাহার নাশ সম্ভব, সে ব্ৰহ্ম নহে ; অতএব জগতের বিষয়ে ব্ৰহ্ম সৰ্ব্বশক্তিমান হয়েন, আপনার স্বৰূপের নাশে শক্তিমান নহেন । এই নিমিত্তই স্বভাবতঃ অমুক্তি ব্ৰহ্ম, কদাপি সমুত্তি হইতে পারেন না। যেহেতু সমুত্তি হইলে তাহার স্বরূপের বিপৰ্জয় অর্থাৎ পরিমাণ, আকাশাদির ব্যাপ্যত্ব ইত্যাদি ঈশ্বরের বিরুদ্ধধৰ্ম্ম সকল তাহাতে উপস্থিত হইবেক ৷” কেহ কেহ জিজ্ঞাসা করিয়া থাকেন যে, যদি পরমেশ্বর রূপ ধারণ করিতে না পারেন, তবে তিনি এই জগৎ রূপে কেমন করিয়া প্ৰকাশ হইলেন ? তিনি বিশ্বরূপ ; সমুদয় বিশ্ব র্তাহার রূপ প্ৰকাশ করিতেছে। তবে কেমন করিয়া বলিব যে, তিনি রূপধারণ করিতে পারেন না ? বেদান্তদর্শনের অনুগমন করিয়া রামমোহন রায় এই তর্কের খণ্ডন করিয়াছেন । তিনি বলিয়াছেন যে, রজুতে সর্পভ্ৰম হয়। রজু, সত্য, সৰ্প মিথ্যা । সেইরূপ বেদান্তের মতে ব্ৰহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা । রামমোহন রায় বলিতেছেন ;-“যাবৎ নামেরূপময় মিথ্যা জগৎ সত্যস্বরূপ ব্ৰহ্মকে অবলম্বন করিয়া সত্যের ন্যায় দৃষ্ট হইতেছে। যেমন, মিথ্যা সৰ্প, সত্য রাজুকে অবলম্বন করিয়া সত্যরূপে প্ৰকাশ পায় ; বস্তুতঃ সে রজ্জ্ব সৰ্প হয়, এমন্ত নহে। সেইরূপ, সত্যস্বরূপ যে ব্ৰহ্ম, তিনি মিথ্যারূপ জগৎ বাস্তবিক হয়েন না। এই হেতু, বেদান্তে পুনঃপুনঃ কাহেন যে, ব্ৰহ্ম বিবৰ্ত্তে, অর্থাৎ আপনি স্বরূপের ধ্বংস না করিয়া প্ৰপঞ্চস্বরূপ দেবাদি স্থাবর পর্য্যন্ত জগদাকারে আত্মমায়ার দ্বারা প্ৰকাশ পায়েন ।