পাতা:মহাত্মা রাজা রামমোহন রায় (সচিত্র) - নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সামাজিক আন্দোলন \986 কৰ্ম্ম পরিত্যাগ নহে। কৰ্ত্তব্য কৰ্ম্ম অবশ্য করিতে হইবে । যে কৰ্ম্ম না। করিলে প্ৰত্যবায় আছে, তাহ অবশ্য করিতে হইবে। পুণ্য হইবে বলিয়া করিবে না, কৰ্ত্তব্যের জন্যই কৰ্ত্তব্যসাধন করিবে । সকাম কৰ্ম্মের বিধি কি প্ৰতারণা ? এস্থলে রামমোহন রায়ের একজন প্ৰতিদ্বন্দ্বী এই এক আপত্তি উপস্থিত করিয়াছেন যে, নিষ্কামধৰ্ম্মই যদি প্রকৃত ধৰ্ম্ম হইল, তবে বেদপুরাণতন্ত্রাদি শাস্ত্ৰে যে সকাম কৰ্ম্মের বিধি রহিয়াছে, তাহা কি প্রতারণা ? রামমোহন রায় ইহার উত্তরে বলিতেছেন যে, উহা প্ৰতারণা নহে। উহার তাৎপৰ্য্য এই যে, মানুষ্যের নানা প্রকার প্রবৃত্তি। যাহাদের চিত্ত, কাম, ক্রোধ, লোভেতে আচ্ছন্ন ; তাহারা পরমেশ্বরের নিষ্কাম আরাধনাতে প্ৰবৃত্ত হইতে পারিবে না; অথচ যদি সকাম শাস্ত্র না পায়, তবে এককালেই শাস্ত্ৰ হইতে নিবৃত্ত হইয়া নিরঙ্কুশ হস্তীর ন্যায় যথেচ্ছাচার করিবে। অতএব, সেই সকল লোককে যথেচ্ছাচার হইতে নিবৃত্ত করিবার জন্য, শাস্ত্ৰে নানাপ্রকার যজ্ঞাদির বিধি রহিয়াছে। যেমন শত্রুবিধার্থীর প্রতি শ্যেন যাগ, পুত্রার্থীর প্ৰতি পুত্ৰেষ্টি যাগ, স্বৰ্গার্থীর প্রতি জ্যোতিষ্ট্যেমাদি যাগ ইত্যাদি বিধান হইয়াছে। কিন্তু শাস্ত্ৰে সকামীর নিন্দা করিয়াছেন। সকাম কৰ্ম্মফল যে অতি তুচ্ছ, ইহা পুনঃপুনঃ বলিয়াছেন। যদি শাস্ত্ৰে সকামীর নিন্দ এবং সকাম কৰ্ম্মফলের প্রতি অবজ্ঞা পুনঃপুনঃ প্ৰকাশ করা না হইত, তাহা হইলে ঐ সকল বাক্যে প্ৰতারণার আশঙ্কা হইতে পারিত। ইহা কৰ্ম্মাচিতো লোক; ক্ষীয়তে। এবমেবামুত্র পুণ্যচিতো লোকঃ ক্ষীয়তে ইতি ॥ যেমন ইহলোকে, কৃষিকৰ্ম্মন্দ্বারা প্ৰাপ্ত ফল পশ্চাৎ নষ্ট হয়, সেইরূপ পরলোকে, পুণ্যকৰ্ম্মদ্বারা প্ৰাপ্ত স্বৰ্গাদি ফল নষ্ট হয় । রাজা রামমোহন রায় প্ৰতিপন্ন করিলেন যে, সকাম কৰ্ম্মমার্গ অপেক্ষা জ্ঞানমাৰ্গ শ্রেষ্ঠ । নিষ্কাম কৰ্ম্ম জ্ঞানমাগের অন্তৰ্গত ।