পাতা:মহাভারত - উপক্রমণিকাভাগ - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আস্তীকপর্ব্ব।
১৭১

পৃথিবীর রাজা হইলেন। তিনি স্বীয় প্রপিতামহু মহাবাহু পাণ্ডুর স্যায় ধনুর্বিদ্যাপারদশী, যুদ্ধে দুর্ধর্ষ ও মৃগয়াশীল ছিলেন। রাজা সর্বদাই মৃগ, মহিষ, ব্যাস্ত্র, বরাহ, ও অন্য অন্য বহুবিধ বন্য জন্তু বধ করিয়া ভূমণ্ডলে ভ্রমণ করেন। একদা তিনি বাণ দ্বারা এক মৃগ বিদ্ধ করিয়া পৃষ্ঠদেশে ধনুগ্রহণ পূর্বক তদনুসরণক্রমে গহন বনে প্রবিষ্ট হইলেন। এই রূপে ভগবান্ মহাদেব যজ্ঞমৃগ বিদ্ধ করিয়া হস্তে ধনুর্ধারণ পূর্বক স্বর্গে সেই মৃগের অন্বেষণার্থে ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিয়াছিলেন। রাজা পরীক্ষিতের বাণে বিদ্ধ হইয়া কোনও মৃগই জীবিত থাকে না ও পলায়ন করিতে পারে না; কিন্তু সেই মৃগ যে বিদ্ধ হইয়া ও অদর্শন প্রাপ্ত হইল, সে কেবল তাঁহার অবিলম্বে স্বর্গপ্রাপ্তির কারণ হইল।

 রাজা পরীক্ষিৎ সেই মৃগের অনুসরণক্রমে ক্রমে ক্রমে দূরদেশে নীত হইলেন, এবং শ্রান্ত ও সৃষ্ণার্ত হইয়া এক গোচারণস্থানে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, এক ঋষি স্তনপানপরায়ণ বৎসগণের মুখনিঃসৃত ফেন পান করিতেছেন। রাজা ক্ষুৎপিপাসায় অতিশয় কাতর হইয়াছিলেন, অতএব সরু গমনে মুনির নিকট উপস্থিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ভোভে মুনীশ্বর! আমি অভিমতনয় রাজা পরীক্ষিৎ { এক মৃগ আমার বাণে বিদ্ধ হইয়া পলায়ন করিয়াছে, আপনি দেখিয়াছেন কি না। সেই মুনি মৌনব্রত, অতএব কিছুই উত্তর দিলেন না। রাজা ক্রুদ্ধ হইয়া ধনুর অগ্রভাগ দ্বারা সমীপপতিত মৃতসর্গ উঠাইয়া তাঁহার স্কন্ধে ক্ষেপণ করিলেন। ঋষি তাহাতে রুষ্ট হইলেন না ও ভাল মন্দ কিছুই কহিলেন না। তখন রাজা মুনিকে তদবস্থ দেখিয়া অক্রোধ হইয়া নগরাভিমুখে প্রস্থান করিলেন। কিন্তু মুনি সেই অবস্থাতেই রহিলেন। মুনীশ্বর অতিশয় ক্ষমাশীল ছিলেন, এবং