পাতা:মহাভারত - উপক্রমণিকাভাগ - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭২
মহাভারত।

মহারাজ পরীক্ষিৎকে অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ জানিতেন, এজন্য নিতান্ত অবমানিত হইয়াও তাঁহাকে শাপ দিলেন না। ভরতকুলপ্রদীপ রাজাও সেই মহর্ষিকে তাদৃশ ধর্মপরায়ণ বলিয়া জানিতেন না, এই নিমিত্তই তাঁহার তাদৃশ অবমাননা করিলেন।

 সেই মহর্ষির অতি তেজস্বী তপঃপরায়ণ এক যুবা পুত্র ছিলেন। তাহার নাম শৃঙ্গী। শৃঙ্গী স্বভাবতঃ অতিশয় ক্রোধপরায়ণ ছিলেন, এক বার ক্রুদ্ধ হইলে শত শত অনুনয়ৰচনেও প্রসন্ন হইতেন না। তিনি অতি সংযত হইয়া সময়ে সময়ে সর্ব্বলোকপিতামহ, সর্ব্বভূতহিতকারী ব্রহ্মার উপাসনা করিতে যাইতেন। এক দিন তিনি উপাসনান্তে ব্রহ্মার অনুজ্ঞা লইয়া গৃহ প্রত্যাগমন করিতেছেন, এমন সময়ে তাহার সখা কৃশ নামে এক ঋষিপুত্র হাসিতে হাসিতে কৌতুক করিয়া তাহার পিতৃবৃত্তান্ত বর্ণন করিলেন। শৃঙ্গী অতিশয় কোপনস্বভাব ও বিষতুল্য, পিতার অপমানবার্তা শ্রবণমাত্র রোষবিষে পরিপূর্ণ হইলেন। কৃশ কহিলেন, অহে শৃঙ্গি! তুমি এমন তপস্বী ও তেজস্বী; কিন্তু তোমার পিতা স্কন্ধে মৃত সৰ্প বহন করিতেছেন। অতএব তার তুমি বৃথা গর্ব করিও না, এবং আমাদিগের মত বেদবিৎ সিদ্ধ তপস্বী ঋষিপুরো কিছু কহিলেও কোন কথা কহিও না। এখন তোমার পুরুষত্বাভিমান কোথায় রহিল ও সেই সকল গর্ব্ববাক্যই বা কোথায় গেল? কিঞ্চিৎ পরেই দেখিবে, তোমার পিতা শব বহন করিতেছেন। আমি তোমার পিতার তাদৃশ অবমাননা দর্শনে অতিশয় দুঃখিত হইয়াছি। কিন্তু সেইরূপ অবমানিত হইলে যাহা করা উচিত, তিনি তদনুরূপ কোনও কর্ম্ম করেন নাই।