পাতা:মহাভারত - উপক্রমণিকাভাগ - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৮
মহাভারত।

কাহারও দ্বেষ করিতেন না, প্রজাপতির ন্যায় সর্ব ভূতে সমদর্শী ছিলেন। তদীয় অপ্রতিহত শাসনপ্রভাবে ব্রাহ্মণ, ক্ষক্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র স্ব স্ব কর্ম্মে রত ছিল। তিনি বিধবা, অনাথ, বিকলাঙ্গ, ও দীন দরিদ্র গণের ভরণ পোষণ করিতেন। সেই সত্যবাদী, দৃঢ়বিক্রম, সর্বতোষক, সর্ব্বপোষক, শ্রীমান্ রাজা দ্বিতীয় শশধরের ন্যায় সর্ব ভূতের নয়নরঞ্জন ও সর্ব্বলোকপ্রিয় ছিলেন। তিনি শারদ্বতের নিকট ধনুর্বেদ শিক্ষা করেন, কৃষ্ণের অতি প্রিয় ছিলেন। কুরুকুল পরিক্ষীণ হইলে, অভিমন্যুর ঔরসে উত্তরার গর্ভে তাঁহার জন্ম হয়, এই নিমিত্ত তাহার নাম পরীক্ষিৎ। তিনি রাজধর্ম্মনিপুণ, সর্বগুণসম্পন্ন, জিতেন্দ্রিয়, মনস্বী, মেধাবী, ধর্ম্মপরায়ণ, ষড়বর্গ[১] জয়ী, মহাবুদ্ধি, ও অদ্বিতীয় নীতিশাস্ত্রবেত্তা ছিলেন; ষাটি বৎসর[২]প্রজাপালন করেন। পরে সকলকে দুঃখাবে নিক্ষিপ্ত করিয়া পরলোকযাত্রা করিয়াছেন। তদনন্তর আপনি সহস্র বৎসরের এই কুলক্রমাগত রাজ্য ধর্ম্মত প্রাপ্ত হইয়াছেন; আপনি শৈশব কালেই অভিষিক্ত হইয়া সর্বভূতের পালন করিতেছেন।

 জনমেজয় কহিলেন, ধর্ম্মপরায়ণ পূর্ব্বপুরুষদিগের চরিত্র অনুশীলন করিয়া বোধ হইতেছে, এই কুলে কোনও কালে এমন


  1. কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য্য।
  2. রাজা পরীক্ষিৎ ষাটি বৎসর বয়সে তক্ষকের দংশনে প্রাণত্যাগ করেন, সুতরাং তাঁহার ষাটি বৎসর প্রজাপালন সম্ভব ও সঙ্গত হয় টীকাকার নীলকণ্ঠ কহেন, মূলে যে ষাটি বৎসর নির্দেশ আছে, তাহা জন্ম অবধি গণনা অভিপ্রায়ে, রাজ্যলাভাবধি গুণনা অভিপ্রায় নহে, কারণ পরীক্ষিৎ ছাব্বিশ বৎসর বয়সে রাজ্যলাভ করিয়া চব্বিশ বৎসর মাত্র প্রজাপালন করেন।