আস্তীকপর্ব। রাজা হয়েন নাই যে, তিনি প্রজাদিগের প্রিয় ও হিতকারী ছিলেন না। আমার পিতা তথাবিধ রাজা হইয়া কেন অকালে কালগ্রাসে পৱিক্ষিপ্ত হইলেন বল, আমি আদ্যোপান্ত অবিকল শুনিতে বাসনা করি। প্রিয়কারী হিতৈষী মন্ত্রিগণ এই রূপে জিজ্ঞাসিত হইয়া পরীক্ষিতের মৃত্যুবৃত্তান্ত যথাবৎ বর্ণন করিতে আরম্ভ করিলেন। মন্ত্রিগণ কহিলেন, মহারাজ! আপনকারু পিতা রাজাধিরাজ পাণ্ডুর ন্যায় শস্ত্রবিদ্যায় অদ্বিতীয় ও সতত মৃগয়াশীল ছিলেন। একদা, তিনি আমাদিগের হস্তে সমস্ত সাম্রাজ্যের ভার সমর্পণ করিয়া মৃগয়ায় গিয়াছিলেন। অরণ্যে প্রবেশ করিয়া শর দ্বারা এক মৃগ বিদ্ধ করিলেন। বিদ্ধ মৃগ পলায়ন করিল। রাজা তৎপশ্চাৎ ধাবমান হইলেন, কিন্তু পলায়িত মৃগকে আর দেখিতে পাইলেন না। তিনি ষষ্টিবর্ষবয়স্ক ও জরাগ্রস্ত হইয়াছিলেন, এজন্য ত্বরায় পরিশ্রান্ত ও ক্ষুধা হইলেন। সেই নিবিড় অরণ্যে এক মুনি মৌনব্রত অবলম্বন পূর্বক সমাধি করিতেছিলেন, রাজা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন। মুনি কিছুই উত্তর দিলেন না। রাজা অত্যম্ভ ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত ছিলেন, মুনিকে মৌমাবলম্বী দেখিয়া তৎক্ষণাৎ রোষবশ হইলেন। তিনি তাঁহাকে মৌনব্রতী বলিয়া জানিতেন না, এই নিমিত্ত্ব কোপাবিষ্ট হইয়া, অটনী দ্বারা ধরাতল হইতে এক মৃত সর্প উদ্ধৃত করিয়া, সেই শুদ্ধচিত্ত ঋষির স্কন্ধে নিক্ষিপ্ত করিলেন। ঋষি এই রূপে অবমানিত হইয়াও কুপিত হইলেন না, রাজাকে ভাল মন্দ কিছুই বলিলেন না, স্কন্ধে মৃত সর্প ধারণ পূর্ব্বক অবস্থিতি করিতে লাগিলেন।
পাতা:মহাভারত - উপক্রমণিকাভাগ - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/২০৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আস্তীকপর্ব্ব।
১৯৯