পাতা:মহাভারত - উপক্রমণিকাভাগ - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
মহাভারত।

হইয়াছি, তাহাতেই কূপে পতিত হইলাম। উপাধ্যায় কহিলেন, দেববৈদ্য অশ্বিনীকুমার যুগলের শুষ কর, তাঁহার তোমাকে চক্ষুঃপ্রদান করিবেন।

 উপমন্যু উপাধ্যায়ের আদেশানুসারে ঋগ্বেদবাক্য দ্বারা অশ্বিনীতুনয়দ্বয়ের স্তব আরম্ভ করিলেন, হে অশ্বিনীকুমাৱযুগল! তোমরা সৃষ্টির পূর্বে বিদ্যমান ছিলে, তোমরাই সজীবপ্রধান হিরণ্যগর্ভ রূপে উৎপন্ন হইয়াছিলে, তোমরাই পরে এই প্রত্যক্ষ পরিদৃশ্যমান বিচিত্র সংসার প্রপঞ্চ রূপে প্রকাশমান হইয়াছ, দেশ কাল, অবস্থা দ্বারা তোমাদের পরিচ্ছেদ করা যায় না, তোমরাই মায়া ও মায়ারূঢ় চৈতন্য রূপে সর্ব কাল বিরাজমান রহিয়াছ, তোমরাই পক্ষিরূপে শরীরবৃক্ষে অধিষ্ঠান করিতেছ, তোমরা সৃষ্টিবিষয়ে পরমাণু পরতন্ত্র বা প্রকৃতি সাপেক্ষ নহ,[১] তোমরা অবাঙ্মনসগোচর, তোমরাই স্বীয় মায়ার বিক্ষেপ[২] শক্তি দ্বারা অশেষ ভুবন প্রকাশ করিয়াছ; আমি অভয় প্রার্থনায় শ্রবণ মনন নিদিধ্যাসন দ্বারা তোমাদিগের উপাসনায় প্রবৃত্ত হইতেছি। তোমরা পরম রমণীয়, সর্ব্বসঙ্গবিবর্জ্জিত,


  1. বেদান্তমতে ঈশ্বর অতিধ্যান মাত্রেই সৃষ্টি করেন; তাহাতে পরমাণু বা প্রকৃতির সহযোগিতা অবশ্যক করে না। কিন্তু নৈয়ায়িকের কহেন, পরমাণু সকল নিত্য, সৃষ্টি প্রারম্ভে ঈশ্বরের ইচ্ছায় পরমাণুপুঞ্জের পরস্পর সংযোগ দ্বারা বিশ্ব সৃষ্টি হয়, তাহার অভিধ্যান মাত্রে হয় না, সুতরাং তন্মতে ঈশ্বর সৃষ্টি বিষয়ে পরমাণুপরতন্ত্র। সাধ্যমতে ইশ্বরের অভিধ্যান মাত্রে সৃষ্টি নহে, প্রকৃতিই সকল সৃষ্টি করেন, প্রকৃতি ব্যতিরেকে সৃষ্টি হয় না।
  2. মায়ার দুই শক্তি, আবরণ ও বিক্ষেপ; আবরণ শক্তি দ্বারা পরমেশ্বরের স্বরূপ তিরোধান এবং বিক্ষেপ শক্তি দ্বারা বিশ্ব প্রকাশ হয়।